১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
ঈদকে সামনে রেখে বেড়েছে ব্যস্ততা

আলফাডাঙ্গায় তৈরি হচ্ছে জামদানি শাড়ি

জামদানি শাড়ি বুনছেন দুই কারিগড় : নয়া দিগন্ত -

ফরিদপুরের নিভৃত পল্লীতে অনেকটা নীরবেই চলছে জামদানি শাড়ি তৈরির কর্মযজ্ঞ। ঈদকে সামনে রেখে এখন পুরোদমে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার শ্রমিকরা। করোনার সময় অনেক কারিগর নারায়ণগঞ্জের জামদানিপল্লীতে কাজ হারিয়ে এক দিকে বেকার হয়ে পড়ে, অন্য দিকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ফরিদপুর অঞ্চলে শিল্পায়নের হাতছানি; এ দুইয়ের সমস্যা ও সম্ভাবনাকে পুঁজি করেই মাত্র দুই বছর আগে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় গড়ে ওঠে জামদানি শাড়ি তৈরির কারখানা। এখানে এখন নারী ও পুরুষের সাথে শিশুরাও সমান তালে কাজ করে যাচ্ছে জামদানি শাড়ি তৈরির উন্মাদনায়। বলা হয়, কোভিড-১৯-এর বিরূপ পরিস্থিতি-ই আলফাডাঙ্গার পানাইল গ্রামে জামদানি শাড়ি তৈরির এই নতুন দিগন্তের সূচনা করে।
পানাইল গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে মোস্তফা রহমান জানান, তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জামদান শাড়ি তৈরির কারখানায় কাজ করেছেন সুদীর্র্ঘ ২৫ বছর। লকডাউনের সময় তার কর্মস্থলের কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন তিনি তার ২৫ বছরের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে নিজ গ্রামেই জামদানি শাড়ি তৈরির কারখানা চালুর সিদ্ধান্ত নেন। মাত্র দুই বছর আগের কথা। নিজের বাড়িতে টিনের একটি জরাজীর্ণ ঘরে প্রথমে একটি তাঁতযন্ত্র বসিয়ে শুরু করেন তিনি তাঁত বুননের কাজ। পরিচিত দু’জন কারিগরের সাথে নিজের স্ত্রীকেও এ কাজে নামান তিনি। জামদানি শাড়ির চাহিদা থাকায় বাড়তে থাকে তার কাজের পরিধি। কোনো সরকারি দফতর বা সংস্থার সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াই এগিয়ে চলছে মোস্তফার জামদানি শাড়ির কারখানা। তার কারখানায় এখন ছয়টি তাঁতযন্ত্রে বোনা হচ্ছে জামদানি শাড়ি।
এখানকার তাঁতশ্রমিকরা জানান, তাদের কারোরই আগে থেকে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। মোস্তফা রহমানের থেকেই হাতে খাড়ি। কয়েকজন কিশোর একেবারে নবীন, সবে মাত্র কাজ শিখতে শুরু করেছে। মোট ১২ জন শ্রমিক রয়েছে মোস্তফার কারখানায়। তবে শ্রমের বিনিময়ে পারিশ্রমিক তেমন মিলছে না তাদের। থাকা ও খাওয়া বাদে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা মজুরি। এতেই নবীনরা বেশ সস্তু‘ষ্ট।
মোস্তফা জানান, তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে সুতা কিনে আনেন। প্রতিটি শাড়িতে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং কোনো শাড়িতে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকার সুতা লাগে। কোনো কোনো শাড়ি বুনতে এক সপ্তাহ সময়ও লেগে যায়। বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়। জামদানি শাড়িগুলো তিনি ঢাকার বিভিন্ন দোকান ও বিসিকে বিক্রি করেন।
মোস্তফা রহমানের স্ত্রী লিপি সুলতানা বলেন, এই কারখানা চালুর পরে তিনি কাজ করছেন। মোস্তফা যখন ঢাকায় যান, তখন তিনি পুরো কারখানা দেখাশোনা করেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর ঢাকা যেতে আর আগের মতো সময় লাগে না। তাই কারখানা আরো বাড়ানোর কথা ভাবছেন তারা।
শেরপুর জেলার বাসিন্দা এই কারখানার আরেক কারিগর আতিকুল বলেন, অনেকদিন মোস্তফা ওস্তাদের সাথে কাজ করেছি। পরে যখন তিনি এই কারখানা দেন তখন আগের কারখানা ছেড়ে আমি এখানে চলে আসি। সরকারের সুদৃষ্টি থাকলে ফরিদপুরের এ অঞ্চলটিও হয়ে উঠতে পারে জামদানিপল্লী।
আরেক শ্রমিক ফরিদপুরের কানাইপুরের বাসিন্দা ইমন বলেন, এখানে দুই বছর ধরে জামদানি শাড়ি তৈরির কাজ করছি। সামনে ঈদ। বেতন ও বোনাস নিয়ে ঈদ করতে বাড়ি যাবো। ঈদে যাতে বেশি শাড়ি বুনতে পারি এ কারণে দিনরাত সমান তালে কাজ করছি।
মোস্তফা রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, কারখানাটি গড়ে তুলতে তার খরচ হয়েছে পাঁচ লাখ টাকার মতো। এখন মাসে তার কারখানায় ২৫ থেকে ৩০টি জামদানি শাড়ি তৈরি হয়। শ্রমিকের বেতন, বিদ্যুৎ বিল-সহ প্রতি মাসে খরচ হয় প্রায় আড়াই লাখ টাকা। শাড়িগুলো বিক্রি করে সব খরচ বাদে মাসে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা লাভ থাকে। তার কারখানায় সর্বনিম্ন ১২ হাজার টাকা এবং সর্Ÿোচ্চ ২০ হাজার টাকার শাড়ি তৈরি হয়।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম জাহিদ জামদানি কারিগর মোস্তফার এই উদ্যোগকে খুবই ইতিবাচক উল্লেখ করে বলেন, অনেকটা নীরবেই তারা এগিয়ে যাচ্ছেন। এই শিল্পোদ্যোগকে এগিয়ে নিতে বিসিক-সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement