১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রোয়াইলবাড়ি দুর্গ হতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র

-

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় অবস্থিত রোয়াইলবাড়ির ঐতিহাসিক দুর্গটি হতে পারে একটি পর্যটনকেন্দ্র। এখানে বাংলাদেশ প্রতœতাত্ত্বিক অধিদফতর মাটির নিচে খনন করে মধ্য যুগের তথা মুঘল আমলের কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন উদ্ধার করে। নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক দুর্গ, সিংহদ্বার, মসজিদ, মহল, গোপন সুরঙ্গপথ, পরিখা, ঢিবি, রাস্তা ও পুকুরসহ প্রাচীন আরো কিছু নিদর্শন। খ্রিষ্ট্রীয় ষোড়শ শতাব্দীর এই ঐতিহাসিক ও প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো তৎকালীন মুসলিম শক্তির প্রাধান্যের দাবিদার।
অবস্থান : কেন্দুয়া উপজেলা সদর হতে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম দিকে রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের নসরতপুর ও জাফরপুর গ্রাম সংলগ্ন বেতাই নদীর তীরে প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত অত্যন্ত খোলামেলা পরিবেশে প্রায় ৪৬-৫০ একর ভূমির ওপর একটি দুর্গ আবিষ্কৃত হয়। মূল দুর্গের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৫০ মিটার এবং প্রস্থ প্রায় ১৫৭ মিটার। দুর্গাভ্যন্তর, বহিরাঙ্গন ও প্যারেড গ্রাউন্ড- এই তিন ভাগে বিভক্ত সমস্ত দুর্গ এলাকাটি।
অভ্যন্তর : পরিখা ও প্রাচীর বেষ্টিত আয়তকার দুর্গের অভ্যন্তরে ইটের গাঁথুনি দিয়ে দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। পূর্ব-পশ্চিম দেয়ালের পরিমাপ প্রায় ৫২০ ফুট এবং উত্তর দক্ষিণ দেয়ালের পরিমাপ প্রায় ৮২৫ ফুট। দুর্গের মধ্যবর্তী স্থানে পূর্ব-পশ্চিমে আরো একটি দেয়াল নির্মাণ করে দুর্গের ভেতরটা দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আরো রয়েছে বহু কক্ষবিশিষ্ট ইমারত।
বহিরাঙ্গন : বহিরাঙ্গনের সম্মুখভাগে পূব দিকে রয়েছে বিশাল দু’টি পুকুর। একটির দৈর্র্ঘ্য প্রায় ২০৭ মিটার ও প্রস্থ প্রায় ৭০ মিটার এবং অপরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০ মিটার ও প্রস্থ ৯০ মিটার। দক্ষিণ অংশে ১৫ গম্বুজ বিশিষ্ট একটি বিশাল আয়তকার মসজিদ রয়েছে। ১২ টি দরজা রয়েছে মসজিদটির। তাই এটিকে বার দুয়ারি মসজিদ বলা হয়।
প্যারেড গ্রাউন্ড : প্যারেড গ্রাউন্ডটি দক্ষিণ দিকের খোলা ময়দানে অবস্থিত। এটিকে সেনাবাহিনীর প্যারেড গ্রাউন্ড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আরো রয়েছে ভগ্নদশার তিনটি প্রাচীন কবর ও একটি গোরস্থান। এখানে নিয়ামত বিবির কবর আছে বলে কিংবদন্তি রয়েছে।
ইতিহাস : জানা যায়, স্বাধীন সুলতানী আমলে নসরত শাহী প্রদেশের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে এই দুর্গটি স্থাপন করা হয়েছিল। আলাউদ্দিন হোসেন শাহের রাজত্বকালে তার ছেলে হোসেন শাহী সালতানাতের সিংহ পুরুষ সুলতান নাসির উদ্দিন নসরত শাহ আল হোসাইনী কামরূপের এই প্রদেশের প্রশাসক ছিলেন। তৎকালীন সম্রাট শেরশাহের রাজত্বকালে বর্তমান নেত্রকোনা জেলা সুসং পরগনা, খালিয়াজুড়ি পরগনা ও নসরত উজিয়াল পরগনা নামে তিনটি পরগনায় বিভক্ত ছিল। বাংলার সুলতান শাহ কামরূপ জয় করার পর এর শাসনভার তার ছেলে নসরত শাহকে দিয়ে যান। পরে কামরূপ রাজা কর্তৃক নসরত শাহ বিতারিত হয়ে পলায়নের সময় তিনি গাড়ো পাহাড় অতিক্রম করে বর্তমান নেত্রকোনার রোয়াইলবাড়িতে আশ্রয় নেন এবং এই প্রদেশের নামকরণ করেন নসরত শাহী। পরে এই অঞ্চলটি ঈশাখার অধীনে আসে। তিনি দুর্গটিকে প্রাসাদ বাড়ি হিসেবে ব্যবহার করতেন।
এই ঐতিহাসিক স্থানটি দেখতে বহু দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে। কিন্তু এখানে সরকারি কোনো প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা নেই। স্থানীয়দের ধারণা এই ঐতিহাসিক স্থানটি হতে পারে দেশের অন্যতম একটি পর্যটনকেন্দ্র।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল