পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে মেয়াদোত্তীর্ণ ১৮টি ইঞ্জিনে চলছে ৪০টি ট্রেন
ট্রেন পরিচালনার জন্য অপরিহার্য ক্রু লিংক বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না- আসাদুল ইসলাম সবুজ লালমনিরহাট
- ২৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০৫
১৯৬১ সালে আমেরিকা, কানাডা, হাঙ্গেরি ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ২২০০ থেকে ২৯০০ সিরিজের আমদানি করা ৩৩টি ইঞ্জিন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের জন্য আনা হয়েছিল। ১৯৮১ সালের পর আর কোনো ইঞ্জিন কেনা হয়নি এ রেল বিভাগে। তবে সবশেষে ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য আনা ২৯০০ সিরিজের (এমইআই-১৫) একটি ইঞ্জিন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগকে দেয়া হয়। এসব ইঞ্জিনের ইকোনমিক আয়ুষ্কাল ২০ বছর নির্ধারিত ছিল। বর্তমানে ওইসব ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হয়ে গেছে ৩৪ বছর থেকে ৪৬ বছর আগেই।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় দফতর সূত্র জানায়, লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের সেকশনের সংখ্যা ৬টি, স্টেশনের সংখ্যা ৭৩টি, ট্রেনের সংখ্যা ৬৬টি, যার মধ্যে ২৬টি ট্রেন বন্ধ থাকায় বর্তমানে ট্রেন চলছে ৪০টি। এর মধ্যে আন্তঃনগর ১৮টি এবং মেইল কমিউটার ট্রেন ২৯টি। এই কমিউটারের মধ্যে চলমান রয়েছে ২১টি এবং বন্ধ রয়েছে ৮টি। লোকাল ট্রেন ২৪টির মধ্যে চলমান রয়েছে ৬টি এবং বন্ধ ১৮টি। এতে ইঞ্জিন প্রয়োজন ৬২টি এবং বর্তমানে আছে মাত্র ৩২টি। তার মধ্যে ৪৬ বছর পুরনো মেয়াদ উত্তীর্ণ ইঞ্জিন রয়েছে ৩১টি।
এসব ট্রেনের ইঞ্জিন ১৯৬১ সালে আমেরিকা থেকে ২২০০ সিরিজের (এমইজি-৯) ১১টি, ১৯৬৯ সালে কানাডা থেকে ২৩০০ সিরিজের (এমইএম-১৪) ৮টি, ফের কানাডা থেকে ১৯৭৮ সালে আরো ২৪০০ সিরিজের (এমইএম-১৪) ৯টি এবং ১৯৮১ সালে হাঙ্গেরি থেকে ৩৩০০ সিরিজের (এমএইচজেড-৮) ৩টি ইঞ্জিন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের জন্য আনা হয়েছিল। এর পর আর কোনো ইঞ্জিন কেনা হয়নি। তবে ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য আনা ২৯০০ সিরিজের (এমইআই-১৫) একটি ইঞ্জিন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগকে দেয়া হয়। এসব ইঞ্জিনের ইকোনমিক আয়ুষ্কাল ২০ বছর নির্ধারিত ছিল। কিন্তু আমেরিকা থেকে আনা ১১টির আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হয়ে গেছে ৩৪ বছর আগেই। কানাডা থেকে প্রথম ধাপে আনা ৮টির আয়ুষ্কাল ২৬ বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় ধাপে কানাডা থেকে আনা ৯টির আয়ুষ্কালও ১৭ বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। হাঙ্গেরি থেকে আনা তিনটি ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল ৩৪ বছর পার হয়েছে। ইঞ্জিনের তিনটির মেয়াদ ফুরিয়েছে ১৪ বছর আগে।
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগ জানায়, আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়েই ছয়টি সেকশনে ৪০টি ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ইঞ্জিন ও ট্রেন চালক তথা ক্রু সঙ্কটের কারণে ২৬টি ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের এ ডিভিশনে মাত্র একটি ইঞ্জিন ছাড়া বাকি ৩১টি ইঞ্জিনই ইকোনমিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে ১৮টি দিয়ে ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ছয়টি ইঞ্জিন পরিত্যক্ত অবস্থায় কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানায় (কেলোকা) পড়ে আছে। এ ছাড়া যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চালনায় অনুপযোগী বাকি আটটি দিয়ে শান্টিং কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। অথচ সব ক’টি ট্রেন পরিচালনার জন্য রেলওয়ের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী প্রতিদিন ৬২টি ইঞ্জিনের প্রয়োজন। কিন্তু লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের কাছে আছে মাত্র ৩২টি ইঞ্জিন। এর মধ্যে ছয়টি মেরামত অযোগ্য হওয়ায় কেলোকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ট্রেন চালনায় অনুপযোগী আটটি ইঞ্জিন শান্টিং কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। অবশিষ্ট ১৮টি মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়ে কোনো রকম ৪০টি ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী জানান, ক্রু স্বল্পতার কারণে ট্রেন পরিচালনার জন্য অপরিহার্য ক্রু লিংক যথাযথভাবে বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি দুর্ঘটনা সংঘটিত হলে কিংবা রিলিফ ট্রেন পাঠানোর প্রয়োজন হলে অন্য কোনো একটি ট্রেন বাতিল করাতে হচ্ছে কিংবা অস্বাভাবিক বিলম্ব করাতে হচ্ছে। তা ছাড়া কোনো ক্রু অসুস্থ হয়ে পড়লে কিংবা বিশেষ প্রয়োজনে ছুটিতে গেলেও ট্রেন বাতিল করার উপক্রম হচ্ছে।
দ্রুত ‘ক্রু’ নিয়োগ এবং ইঞ্জিন সংযোজন করা না গেলে চলতি বছর টাইম টেবিল ৫০ নম্বর অনুযায়ী ট্রেন পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এসব সমস্যা সমাধানে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের (রাজশাহী) প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলীকে এসব সমস্যা উল্লেখ করে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা