ঝিনাইদহে বিষাক্ত আগাছা পার্থেনিয়ামের বিস্তার
- আলাউদ্দিন আজাদ ঝিনাইদহ
- ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০৫, আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:২১
ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় প্রাণঘাতী আগাছা পার্থেনিয়ামের বিস্তারে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সচেতনতার অভাবে গ্রামের মানুষ এই আগাছার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছে। গ্রামের সর্বত্রই এখন প্রাণঘাতী পার্থেনিয়ামের উপস্থিতি চোখে পড়ে। রাস্তার দুই ধারে ও ফসলের ক্ষেতে সাদা ফুলে ফুলে আচ্ছাদিত পার্থেনিয়াম। দেখলে মন জুড়িয়ে যাবে। কিন্তু এই সুন্দরের মধ্যে লুকিয়ে আছে পশু ও মানবদেহের জন্য অতি বিষাক্ত উপাদান। ঝিনাইদহ অঞ্চলে কয়েক বছর ধরে এই আগাছার বিস্তার দেখা যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে ভয়ঙ্কর এই আগাছার বিরুদ্ধে শক্তিশালী জনমত গড়ে ওঠেনি।
ঝিনাইদহের পশ্চিমাঞ্চলের বাজার গোপালপুর, চোরকোল, গোবিন্দুপর, মোহাম্মদপুর, বংকিরা ও আসাননগর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে রাস্তার দুই ধারে, ধান ক্ষেত, মরিচ ক্ষেত, পুকুরের পাড় ও ক্ষেতের আইলে পার্থেনিয়াম আগাছার ঝোপ। বিষাক্ত এই গাছ থেকে গরু, ছাগল, শেয়াল, কুকুর ও মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগ চড়িয়ে পড়ছে। এই গাছের পাতা দেখতে অনেকটা গাজর গাছের মতো। স্থানীয় মানুষ একে ‘ঝাও ফুল’ আবার ‘গাঁজার গাছ’ বলেও চেনেন। গাছগুলো সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ ফুট লম্বা হয়। ছোট ছোট ফুল দেখতে বেশ সুন্দর। অথচ বিষাক্ত এই গাছ সম্পর্কে কৃষকদের নুনতম কোনো ধারণা নেই।
কৃষিবিদরা বলছেন, পার্থেনিয়াম একটি উদ্ভিদ জাতীয় গাছ। যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এটি বাঁচতে সক্ষম। বিশেষ করে ফসলের ক্ষেত কিংবা রাস্তার দুই ধারে এ আগাছাটি বেশি জন্মে। বেঁচে থাকতে তাদের কোনো যতেœর প্রয়োজন হয় না। পার্থেনিয়াম এ অঞ্চলের নিজস্ব কোনো উদ্ভিদ নয়। ভারত থেকে দানাদার খাদ্য কিংবা গরুর খুরের মাধ্যমে বাংলাদেশে এসেছে। বর্তমান বিষাক্ত পার্থেনিয়াম সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, শুধু ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় কমপক্ষে ১০ হেক্টর পতিত জমিতে এই পার্থেনিয়াম বংশবিস্তার করেছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চান্দুয়ালী গ্রামের কৃষক রেজাউল ইসলাম বলেন, এই আগাছাটির নাম বা গাছটি ক্ষতিকর কি না সে সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। তবে গ্রামের ক্ষেত-খামারে গাছটি ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিক গিয়াস উদ্দীন সেতু জানান, গাছটি খুবই ক্ষতিকর, এমনকি ক্যান্সারের মতো রোগ হতে পারে। গাছটির বিষয়ে সরকারের এখন থেকেই পদক্ষেপ নেয়া দরকার। বংকিরা গ্রামের বাবুল বিশ^াস জানান লোকমুখে শুনেছি এই পার্থেনিয়াম গাছটি নাকি খুবই বিষাক্ত এবং ক্যান্সারের জীবাণু বহন করে। কেটে ফেললেও আবার সেখান থেকে নতুন করে জন্ম নেয়। সাধুহাটী গ্রামের যুবক আব্দুস সালাম জানান, ইউটিউব থেকে জানতে পেরেছি এই গাছটি মানুষ এবং গরু-ছাগলের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ফলে বিষাক্ত এই গাছগুলো নিশ্চিহ্ন করতে এখনই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। বাজার গোপালপুর গ্রামের মনজুর জানান, ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এই বিষাক্ত আগাছা নিধনের জন্য পদক্ষেপ না নিলে এক সময় জেলাব্যাপী এই আগাছা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়বে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-এ নবী বলেন, মানবদেহ ও গবাদি পশুর জন্য এই উদ্ভিদ খুবই বিপজ্জনক। পার্থেনিয়াম গাছে হাজার হাজার ফুল থাকে। যে কারণে পরাগ রেণু যদি বাতাসের মাধ্যমে মানুষ অথবা কোনো প্রাণীর শরীরে পড়ে সেখানে মারাত্মক চর্মরোগ ও ক্যান্সারের মতো রোগ হতে পারে। এই আগাছার বীজ বাতাসের মাধ্যমে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, এটি শুধু বিষাক্তই নয়, যে কোনো ধরনের ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি করে। যদি কোনো ক্ষেতে পার্থেনিয়ামের বিস্তার ঘটে তাহলে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা