০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১,
`

৪০০ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা ১৬ মাস বন্ধ পাবনা সুগার মিল

-

৪০০ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে ১৬ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে পাবনা সুগার মিল। ফলে প্রায় ৮০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে চলেছে। আখচাষি, চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষি ফেডারেশনের নানামুখী আন্দোলনের পরও চিনিকল চালুর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। কবে নাগাদ চালু হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে সুগার মিল জোনে আখচাষ চার ভাগের একভাগে নেমে এসেছে। দ্রুত চালু না করলে আখ চাষ আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় পাবনা সুগার মিল ঘিরে ছিল ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য। শ্রমিক-কর্মচারী, চাষিদের কোলাহলে মুখর থাকত পুরো এলাকা। তবে এখন সে জায়গায় চোখে পড়ে সুনসান নীরবতা। মিল গেটের পাশে গড়ে ওঠা দোকানগুলো একের পর এক বন্ধ করে তারা অন্যত্র ব্যবসার জন্য চলে গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, চিনিকলের ভেতরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে আখ পরিবহনে ব্যবহৃত দুই শতাধিক ট্রলি। যে ট্রলিগুলো সব সময় মহা সড়কে দাপিয়ে বেড়াত। মাড়াইয়ের যন্ত্রপাতিগুলোও মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে আর কিছুদিন পরে থাকলে এসব ট্রলি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাবে।
মিল সূত্র জানায়, আখ মাড়াই প্ল্যান্টসহ চিনিকলে প্রায় ৮০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় মাড়াই যন্ত্রের ডোঙ্গা, নাইফ, ক্রাসার, বয়লার হাউজ, রুলার, ড্রয়ারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। এতে বিপুল অর্থের অপচয় হচ্ছে।
১৯৯২ সালে ২৭ ডিসেম্বর পাবনা সুগার মিলটি ৬০ একর জমির ওপর স্থাপিত হয়। এটি চালু করতে ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। মিলটি ১৯৯৭-৯৮ মাড়াই মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। পরের বছর থেকেই বাণিজ্যিকভাবে মাড়াই মৌসুম চালু করে কারখানাটি। চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর জেলার ৯ উপজেলায় ব্যাপকভাবে আখ চাষ শুরু হয়। তবে উৎপাদন শুরুর পর থেকেই লোকসান গুনতে থাকে মিলটি। ফলে ২০২০ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় চিনি আহরণের হার, আখের জমি, লোকসানের পরিমাণ ও ব্যবস্থাপনার খরচ বিবেচনায় পাবনা সুগার মিলসহ ছয়টি মিলে আখ মাড়াই না করার প্রস্তাব দেয়। ফলে ২ ডিসেম্বর মিল বন্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। তখন থেকেই পাবনা চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ হয়ে যায়। এতে আখ নিয়ে ভোগান্তি শুরু হয় চাষিদের। বর্তমানে মিলটি প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দেনাগ্রস্ত। মিলটিতে স্থায়ী, অস্থায়ী ও মৌসুমভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজার ২০০ জন।
মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উদ্দিন জানান, চিনিকলটি এখনো পুরোপুরি বন্ধ করা হয়নি। আধুনিকায়নের মাধ্যমে এটি চালুর প্রক্রিয়া চলছে। তবে যত দিন পর্যন্ত চালু না হচ্ছে তত দিন পাবনার আখচাষিদের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের সাথে সংযুক্ত করা হবে। ফলে জমির আখ নিয়ে কৃষকের দুশ্চিন্তার কারণ নেই। বর্তমানে পাবনা চিনিকলের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দেনা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement