ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র রেল-ব্রিজসহ ৩টি ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ
- সাইফুল মাহমুদ ময়মনসিংহ অফিস
- ২৯ জুন ২০১৯, ০০:০০
দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার ও কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে ময়মনসিংহ অঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র রেলওয়ে ব্রিজসহ তিনটি বড় রেলওয়ের ব্রিজ এখন ট্রেন চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব জরাজীর্ণ ব্রিজের ওপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত ট্রেন চলাচল করছে।
জানা যায়, ১৮৮৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন স্টেশন উদ্বোধন করা হয়। এ জংশন হয়ে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা, ভৈরব, মোহনগঞ্জ, জারিয়া-ঝাঞ্জাইল ও জামালপুরের পাঁচটি রেলপথ রয়েছে। রেলওয়ের ময়মনসিংহ সাব-ডিভিশনের অধিনে ময়মনসিংহ-শ্রীপুর সেকশনে ৯২টি, ময়মনসিংহ-বিদ্যাগঞ্জ সেকশনে ৩২টি, ময়মনসিংহ-গৌরপুর সেকশনে ২৭টি, গৌরীপুর-আঠারোবাড়ি সেকশনে ২৭টি, গৌরীপুর-মোহনগঞ্জ সেকশনে ৮২টি, শ্যামগঞ্জ-জারিয়া সেকশনে ২৫টিসহ মোট ২৮৫টি ছোট-বড় ব্রিজ ও কালভার্ট রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি বড় ব্রিজ রয়েছে, যা ময়মনসিংহ নগরীর কেওয়াটখালি সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর প্রায় ৯০০ মিটার ব্রহ্মপুত্র রেলওয়ে ব্রিজ, ময়মনসিংহ-ঢাকা রেলপথে কাউরাইদ রেলস্টেশন সংলগ্ন সুতিয়া নদীর ব্রিজ এবং ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ রেলপথের ঠাকুরাকোণার বারহাট্টায় কংস নদীর ওপর রেল ব্রিজটি অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বংস করা ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত রেলওয়ে ব্রিজটি পুনঃসংস্কার করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ব্রহ্মপুত্র নদের এ ব্রিজটি কোনো সংস্কার করা হয়নি। ফলে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্রিজটির ৬৬২টি স্লিপারের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি স্লিপার জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। অনেক স্লিপার ভেঙে নষ্ট হয়েছে। অনেকে স্লিপারের নাটবোল্টু খসে পড়েছে। রাতে লাইনের স্লিপার ও নাটবোল্টুসহ গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম চুরি হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার না করায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ব্রিজটি।
স্থানীয়রা জানান, ব্রিজের বেশির ভাগ স্লিপার নষ্ট। মাদকাশক্তরা নাটবোল্টুসহ স্লিপার ও ফিটিংস খুলে নিয়ে যায়। প্রায়ই ট্রেন চলাচলের সময় ঘর্ষণে আগুনের বিচ্ছুরণ হয়। এ দিকে শতবর্ষের পুরনো ব্রহ্মপুত্র ব্রিজে রেলিং বা সেইফ গার্ড নেই। ব্রিজের ওপর অবস্থান করা নিষেধ থাকলেও শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ট্রেন চলাচলের সময় বিপদে পড়ে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হন। ব্রহ্মপুত্র ব্রিজের কাছে কেওয়াটখালি সড়কের ওপর ওভারব্রিজটির অবস্থা খুবই করুণ। এ ব্রিজটির বেশির ভাগ স্লিপার ভেঙে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। নাটবোল্টু খসে পড়েছে। টুকরো টুকরো কাঠের জোরাতালি দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। শম্ভুগঞ্জ রেলস্টেশনসংলগ্ন ‘কোরেরপাড়’ নামক রেলওয়ের ব্রিজটি ১৯৮৮ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পুনঃসংস্কার করা হয়। এরপর আর স্লিপার বসানো হয়নি। রেলওয়ের এই দু’টি ব্রিজ ও একটি ওভারব্রিজের ওপর দিয়ে প্রতিদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম, ভৈরব, মোহনগঞ্জ ও জারিয়া-ঝাঞ্জাইলগামী চারটি আন্তঃনগর ট্রেনসহ বেশ কয়েকটি লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ওই অঞ্চলের ট্রেন যাত্রীরা।
এ ছাড়া ময়মনসিংহ-ঢাকা রেলপথের শ্রীপুর পর্যন্ত ময়মনসিংহ সেকশনে ২৯টি ব্রিজ-কালভার্ট রয়েছে। এর মধ্যে কাউরাইদ রেলস্টেশন সংলগ্ন সুতিয়া নদীর ওপর ব্রিজ ও গফরগাঁও ও মশাখালী স্টেশনের মাঝামাঝি ভাসুটিয়া ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ। কাউরাইদের সুতিয়া ব্রিজটি চার বছর আগে এবং ভাসুটিয়া ব্রিজটি ২০০৭ সালে সংস্কার করা হয়।
রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) সুকুমার বিশ্বাস জানান, অত্র সাব-ডিভিশনে ট্রেন চলাচলের ঝুঁকিপূর্ণ কোনো ব্রিজ-কালভার্ট নেই। কিছু ত্রুটি থাকলেও বিপদজনক নয়। স্লিপারসহ নাটবোল্টু ও অন্যান্য ফিটিংস সামগ্রীর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লেখা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার করা হবে।