জামালপুরে তিন ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়
- খাদেমুল বাবুল জামালপুর
- ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
জামালপুরে তিন ফসলি উর্বর জমির টপ সয়েল কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অবৈধ ইটভাটায়। প্রতি বছরই এভাবে ফসলি জমি থেকে টপ সয়েল কেটে নেয়ার কারণে জমি তার উর্বরতাশক্তি হারাচ্ছে, ফসল উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে এবং নষ্ট হচ্ছে এলাকার রাস্তাঘাট ও প্রাকৃতিক পরিবেশ।
জেলা পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য মতে, জামালপুর জেলার সাত উপজেলায় অন্তত ১১০টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ১২টি ইটভাটার। বাকি ৯৮টি ইটভাটা কোনো আইনে কিভাবে চলছে এর কোনো সদুত্তর নেই কারো কাছে।
প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর বরাবরই বলে আসছে- অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু কৃষি জমি থেকে টপ সয়েল কেটে নেয়ার কার্যক্রম চলছেই। এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
সম্প্রতি জেলা আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় কমিটির সভায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এই প্রস্তাব হালে পানি পায়নি। সম্প্রতি নামকাওয়াস্তে সদর উপজেলার মেসার্স স্টার ব্রিকস, রূপালী ব্রিকস, কিং ব্রিকস ও স্টার ওয়ান ব্রিকস নামে চারটি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে ছয় লাখ টাকা করে ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হলেও বাকি সব অবৈধ ইটভাটা চলছে বহাল তবিয়তে।
জানা যায়, জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় রয়েছে ২৪টি ইটভাটা। যার মধ্যে ২২টিরই কোনো বৈধতা নেই। উপজেলার অবৈধ ইটভাটা নদীর জমি, বর্গা কৃষিজমি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন হওয়ায় ইটভাটাগুলোর পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই। কিন্তু বন্ধ নেই তাদের কর্মযজ্ঞ।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার ভুরুঙ্গা গ্রামে একটি ক্লিনিকের মাত্র ১০০ মিটারের মধ্যে চারটি অবৈধ ইটভাটা বহাল তবিয়তে ইট তৈরির রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছে। মেলান্দহ উপজেলার হাজরাবাড়ী পৌর এলাকার ব্রাহ্মণপাড়ায় তিন ফসলি জমির টপ সয়েল বিক্রির হিড়িক পড়েছে। একই জায়গায় ছয়টি এস্কেভেটর বসিয়ে কাটা হচ্ছে টপ সয়েল। ৩০টি ডাম্পট্রাক, মাহিন্দ্রা ট্রাক্টরে পরিবাহিত হয়ে স্থানীয় রাস্তাঘাট নষ্ট করে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। মাটিবোঝাই ভারী ডাম্পট্রাক চলাচলের কারণে ভেঙেচুরে তছনছ হচ্ছে রাস্তাঘাট। ধুলাবালুতে একাকার হচ্ছে বাড়িঘর, গাছপালা ও বৃক্ষরাজি।
পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র এবং অনুমোদন ছাড়া ইট তৈরির জন্য কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, পুকুর, খাল-বিল, দীঘিনালা, নদ-নদী কিংবা পতিত জমি থেকে মাটি সংগ্রহ করার নিয়ম নেই। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়কে ইট বা ইটের কাঁচামাল বোঝাই ভারী যানবাহন চলাচলও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ আইন লঙ্ঘনকারীদের দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু কে মানে কার আইন।
জামালপুর পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি ও মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটিকাটা পরিবেশের জন্য হুমকি। এ বিষয়ে প্রশাসনের জরুরি ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম আলমগীর বলেন, নদীর জায়গা দখল করে ইটভাটা করায় তাদের ছাড়পত্র নেই। আমি এখানে নতুন এসেছি। তবু ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান চলমান আছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা