তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চন বাঁশশিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার
- এম এ বাসেত তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়)
- ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
তেঁতুলিয়ায় ধ্বংসের মুখে কাঞ্চন/বোম্বাই ভিন্ন প্রজাতির বাঁশশিল্প টিকিয়ে রাখতে দরকার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে ছায়া নিবিড় প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে শারিয়ালজোত গ্রামটি অবস্থিত। গ্রামের দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম তিন দিক ভারত সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া দ্বারা বেষ্টিত। যার পশ্চিমে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার ইসলামপুর ও চপড়া থানা এবং দক্ষিণে উত্তরের জেলা দিনাজপুর। শাড়িয়ালজোত গ্রামটি দেখতে অনেকটা ‘ব’ অক্ষরের একটি দ্বীপের মতো। সীমান্তবর্তী গ্রাম হলেও কাঞ্চন বা বোম্বাই বাঁশ ও মৌসুমি শীতকালীন বিদেশী বাহারি প্রজাতির টিউলিপ ফুলের চাষ হওয়ায় দেশের মানুষের কাছে বেশ পরিচিতি। তেঁতুলিয়া উপজেলার সমতলে চা চাষ শুরুর আগে আখ (কুইসার), আনারসসহ প্রচুর শাকসবজি চাষাবাদ হতো।
শাড়িয়ালজোত গ্রামে উৎপাদিত হচ্ছে কাঞ্চন বা বোম্বাই বাঁশ নামে একধরনের ভিন্ন প্রজাতির বাঁশ। বাঁশটি প্রায় ২০-২২ ইঞ্চি প্রস্থ এবং ১৫০-২০০ ফিট দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে। ভারতের লোকজনের কাছে বোম্বাই বাঁশ নামে পরিচিতি হলেও তেঁতুলিয়া অঞ্চলে কাঞ্চন বাঁশ নামে পরিচিত।
স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে শারিয়ালজোত গ্রামের মরহুম সরাফত আলী ভারতের চপড়া থানা এলাকা থেকে এ বাঁশের বীজ এনে সর্বপ্রথম তার বাড়িতে রোপণ করে। তার বাড়ি থেকেই পরবর্তীতে তেঁতুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বোম্বাই বাঁশের বিস্তৃতি লাভ করে।
বাঁশচাষিরা জানান, বোম্বাই বাঁশের চারা শেকড় থেকে বের হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে পূর্ণতা আসে। প্রতিটি বাঁশ ২৫০-৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। বিগত কয়েক বছরে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় কাঞ্চন বাঁশের খবর প্রকাশ হয়েছে। প্রতি পিচ চারা ৫০০-৭০০ টাকা মূল্যে বিক্রি হয়। সাধারণত চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত কাঞ্চন বাঁশের চারা পাওয়া যায়।
বর্তমানে তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়া, চিমনজোত, বাংলাবান্ধাসহ পঞ্চগড়ের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজনের বাড়িতে কাঞ্চন বাঁশ চাষাবাদ হচ্ছে। দেশ-বিদেশে কাঞ্চন বাঁশের তৈরি ঘরের শৌখিন আসবাবপত্রের কদর প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কিন্তু বিপুল সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা তেঁতুলিয়ায় সরকারি বা বেসরকারিভাবে বোম্বাই বা কাঞ্চন বাঁশ দিয়ে শৌখিন আসবাবপত্রের কোনো কারখানা গড়ে ওঠেনি।
এ ব্যাপারে আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, ডোমার, নীলফামারী এর গবেষণা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সরকার মুঠোফোনে জানান, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় বোম্বাই/কাঞ্চন জাতের ভিন্ন প্রজাতির একটি বাঁশ চাষাবাদ হয়ে থাকে। এখনো এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেনি। তবে আমাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাঁশচাষিদের পরামর্শসহ ঘরের শৌখিন আসবাবপত্র তৈরিতে আগ্রহী যুবক বা ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণসহ টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে থাকি। পর্যায়ক্রমে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রসারিত হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা