২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ শাবান ১৪৪৬
`

নাজিরপুরে ৬ কোটি টাকার সেতুতে উঠতে কাঠের সিঁড়ি

নাজিরপুর উপজেলার চাঁদকাঠি এলাকায় নির্মিত সেতু : নয়া দিগন্ত -

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চাঁদকাঠি এলাকার তালতলা শাখা নদীর ওপর নির্মিত ৬৬ মিটার দীর্ঘ সেতু স্থানীয়দের জন্য ছিল স্বপ্নের মতো। তবে সেই স্বপ্ন কিছুটা অন্ধকারে ঢেকে গেছে, কারণ সেতুর মূল কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক এখনো নির্মিত হয়নি। ফলস্বরূপ, সেতুর দুই পাশে কাঠের সিঁড়ি তৈরি করে, ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে ১৩ গ্রামের হাজারো মানুষকে। স্কুল-কলেজ, হাটবাজার, অফিসসহ চিকিৎসার জন্য যাতায়াতকারীদের প্রতিদিন এ ঝুঁকিপূর্ণ সিঁড়ি দিয়ে সেতু পার হচ্ছেন, আর তাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ হয়ে উঠছে এক অনিশ্চিত যাত্রা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চাঁদকাঠি এলাকার তালতলা শাখা নদীর ওপর ২০২০ সালের ২৩ মার্চ ৬৬ মিটার দৈর্ঘ্য নাওটানা-পাকুরিয়া পাকা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের সময়সীমা ছিল ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিমরান মায়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ধীরগতিতে মূল সেতুর কাজ প্রায় শেষ করলেও সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করেই পুরো টাকা তুলে নেয়। পাঁচ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা সেতুটি এখন এলাকার মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তালতলা শাখা নদীর পশ্চিম প্রান্তে পাকুরিয়া, শিংখালী, গোলারহাট, কদমবাড়ি ও লড়া গ্রাম। পূর্ব প্রান্তে নাওটানা, জিলবুনিয়া ও কলারদোনিয়া গ্রাম ছাড়াও সংযোগ সড়ক বিহীন সেতুর পূর্ব প্রান্তে দীর্ঘা মহিলা কলেজ, দীর্ঘা টেকনিক্যাল কলেজ, গাওখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বৈঠাকাটা কলেজ, চাঁদকাঠী আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়সহ দীর্ঘা বাজার রয়েছে। পশ্চিম প্রান্তের আটটি গ্রামের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজ, হাটবাজার, উপজেলা সদর, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা হাসপাতালে যাতায়াতের জন্য সিঁড়ি দিয়ে সংযোগ সড়ক বিহীন সেতু পারাপার হয়। আবার সেতুর পূর্ব প্রান্তের গ্রামগুলোর মানুষের পশ্চিম প্রান্তের গ্রামগুলোতে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি দিয়ে সেতুটি পার হতে হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নাওটানা-পাকুরিয়া মূল সেতুর মাঝ বরাবর রেলিংয়ের কিছু কাজ বাকি থাকলেও সেতুটির মূল অংশের কাজ প্রায় শেষ বলা যায়। তবে নির্মাণ হয়নি সেতুর সংযোগ সড়ক। ফলে সেতুর দুই পাশে কাঠের সিঁড়ি বানিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন স্থানীয় জনসাধারণসহ স্কুল-মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীরা। আগে এখানকার মানুষ নদীতে খেয়া দিয়া পারাপার হলেও সেতু হওয়ায় পর খেয়া পারাপার বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা মনিকা বিশ্বাস বলেন, বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না। মুরব্বিদের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। সেতুর সংযোগ সড়কটি যেন দ্রুত করে দেয়া হয়। রাইসুল ইসলাম ইউনুস জানান, ব্রিজের কাজ সমাপ্ত না করে ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে ব্রিজের এপার-ওপার সিঁড়ি ও বালুর বস্তা দিয়ে চলার ব্যবস্থা করি। আমি নিজে কয়েকবার এ নিয়ে অফিসে গেলে তারা বলেছে ঠিকাদার পালিয়ে গেছে।
পিরোজপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী রনজিত দে বলেন, নাওটানা সেতুর মূল অংশের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু সংযোগ সড়কের (অ্যাপ্রোচ) কাজ বাকি আছে। ৫ আগস্টের পর থেকে ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি, আমরা এখনো ঠিকাদারকে পাইনি। আমরা খুব দ্রুতই সংযোগ সড়কের কাজ করার ব্যবস্থা করব। এই ব্রিজের সংযোগের কারণে এলাকার লোকজনের যাতায়াতে কষ্ট হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement