২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ শাবান ১৪৪৬
`
বাকৃবি গবেষকদের উদ্ভাবন

অধিক ফলনশীল বাউ মিষ্টিআলু-৫

অধিক ফলনশীল বাউ মিষ্টিআলু-৫ -

পুষ্টিগুণে ভরপুর মিষ্টিআলু ভাতের বিকল্প হিসেবে শর্করার চাহিদা পূরণ করে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে প্রায় ২৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে মিষ্টিআলুর চাষ হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ থাকায় এটি পুষ্টির অন্যতম ভালো উৎস। কিন্তু স্থানীয় জাতের মিষ্টিআলুর উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় এবং বাজারে কম মূল্য থাকায় মিষ্টিআলু চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
তবে আশার কথা হলো, মিষ্টিআলুর গড় উৎপাদন বাড়াতে এবং কৃষকদের লাভবান করতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা উদ্ভাবন করেছেন ‘বাউ মিষ্টিআলু-৫’। এটি স্থানীয় জাতের তুলনায় অধিক ফলনশীল ও লাভজনক।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম আরিফ হাসান খানের নেতৃত্বে একদল গবেষক এই মিষ্টিআলুর উচ্চ ফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী নতুন জাত ‘বাউ মিষ্টিআলু-৫’ উদ্ভাবন করেছেন। গবেষক দলের নেতৃত্বে থাকা অধ্যাপক এ বি এম আরিফ হাসান খান জানান, বাউ মিষ্টিআলু-৫ একটি উচ্চফলনশীল জাত। এটি সাধারণ আলুর চেয়ে তিন গুণ বেশি ফলনশীল, যার প্রতিটি গাছে এক থেকে দেড় কেজি আলু পাওয়া যায়। চারা রোপণের ৯০ দিনের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়। এ ছাড়া এ জাতের আলু সারা বছরই চাষ করা যায়। বাউ মিষ্টিআলু-৫ এর প্রতিটি গাছ থেকে ১০০ দিনেরও বেশি বয়সে সর্বোচ্চ ফলন দেয় জাতটি। সাধারণ আলু প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ২৫ টন ফলন দিলেও বাউ মিষ্টিআলু দেয় ৩০ টনেরও বেশি ফলন।
এই মৌসুমে ময়মনসিংহ, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল ও খুলনায় বাউ মিষ্টিআলু-৫ এর চারা সরবরাহ করা হয়েছিল। আলু চাষ করে অধিক ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। ময়মনসিংহ সদরের কৃষক হাসান বলেন, এই জাতের আলু চাষ করে প্রতি ১০ বর্গমিটারে ৩০ কেজি পর্যন্ত ফলন পেয়েছি। স্থানীয় জাতের প্রতি গাছে ৭০০-৭৫০ গ্রাম ফলন পাওয়া গেলেও এই জাতের আলুতে ১২০০-১৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ফলন পেয়েছি।
মিষ্টিআলুর জাত উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা দলের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মুন মোদক বলেন, ক্রিম, বেগুনি ও কমলা এই তিন রঙের আলুগুলোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কমলা রঙের আলু গাজরের বিকল্প হিসেবে সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়। বেগুনি রঙের আলু আগুনে পুড়িয়ে খেলে দারুণ লাগে। এ ছাড়া পুড়ানোর পর এতে গ্লুকোজ ও সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়। সাধারণ ক্রিম রঙের আলু সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। আবার পুড়িয়েও খাওয়া যায়।
প্রধান গবেষক অধ্যাপক এ বি এম আরিফ হাসান খান বলেন, বাউ মিষ্টিআলু-৫ কম-বেশি প্রায় সারা বছরই চাষ করা যায়। তবে রবি মৌসুমে (১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ) এর ফলন ভালো হয়। মিষ্টিআলু আমিষ, জিংক, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘কে’ ও পটাশিয়ামের জোগান দেয়। উপযুক্ত ও অনুকূল পরিবেশে বাউ মিষ্টিআলু-৫ এর উৎপাদন প্রতি হেক্টরে সর্বোচ্চ ৪০ টন হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, তবে রোগ সংক্রমণ, ইঁদুরের উৎপাতসহ কিছু প্রতিকূলতা থেকেই যায়। এমন অবস্থায় সর্বোচ্চ উৎপাদন হেক্টরপ্রতি প্রায় ৩৩ টনের মতো হয়। দেশে প্রচলিত মিষ্টিআলুর গড় উৎপাদন ১০ টনের মতো। সে হিসাবে এই আলুর উৎপাদন তিন গুণের বেশি।


আরো সংবাদ



premium cement