শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন তুলতে পারছেন না, অনিশ্চিত ফরম পূরণ
- কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
- ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ সরকারি মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন, উপবৃত্তির কার্যক্রমসহ যাবতীয় কাজকর্ম চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে কলেজের শিক্ষাকার্যক্রম। আগামী ৩ মার্চ থেকে শুরু হওয়া উচ্চমাধ্যমিকের দেড় হাজার শিক্ষার্থীর ফরম ফিলাপের কার্যক্রমও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় কলেজের শিক্ষার্থীরা গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এ সমস্যা সমাধানের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এর আগে একই দাবিতে ইউএনওর কাছে স্মারকলিপি দেয় শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের ২৭ তারিখ কলেজের অধ্যক্ষ আজিজ আহমেদ হুমায়ুন বদলি হয়ে যাওয়ার পর থেকে এ অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। পরে কাউকে অধ্যক্ষ, দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কিংবা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ না দেয়ায় কলেজের কোনো কাজ করা যাচ্ছে না।
কলেজের প্রধান সহকারী কাজী কামরুন্নেছা জানান, ৪৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন হচ্ছে না চার মাস ধরে। ছাত্রদের ফরম ফিলাপের সরকারি অংশ, যাকে ‘সোনালী সেবা’ বলা হয়। অধ্যক্ষ না থাকায় এই ‘সোনালী সেবার’ অংশের টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে বোর্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় শিক্ষক-কর্মচারীরা ১৫ লাখ টাকা ঋণ করে ‘সোনালী সেবার’ টাকা পরিশোধ করেছে। সামনে প্রায় দেড় হাজার পরীক্ষার্থীর এইচএসসির ফরম ফিলাপের ‘সোনালী সেবার’ টাকা কিভাবে পরিশোধ করা হবে, তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছে তারা। এবার অন্তত এ খাতে আরো ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
কলেজের হিসাবরক্ষক সোহরাব হোসেন জানান, কলেজে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই হাজার ৭০০। পরীক্ষার্থীরা ফরম ফিলাপসহ সব ধরনের ফি ব্যাংকে জমা দেয়। সেখান থেকে অধ্যক্ষের স্বাক্ষরে ‘সোনালী সেবার’ অংশের টাকা উত্তোলন করে সংশ্লিষ্ট খাতে পাঠানো হয়। শুধু তাই নয়, অধ্যক্ষ না থাকায় কলেজের শিক্ষাকার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কলেজের ইংরেজি প্রভাষক সিরাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, কলেজের বেতনের ওপর নির্ভর করে আমাদের সংসার চলে। চার মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় আমাদের ধারকর্জ করে চলতে হচ্ছে। তার ওপর কলেজের দায়দেনা মেটাতেও হচ্ছে আমাদের নিজেদের টাকায়। এভাবে তো কোনো প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না।
এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জায়ইস-ই-মুহম্মদ বলেন, আমাদের ক্লাস, ফরম ফিলাপ, উপবৃত্তিসহ সব কাজ অধ্যক্ষ না থাকায় আটকে আছে। আমরা হতাশার মধ্যে রয়েছি। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত।
ছাত্রছাত্রীরা জানান, অধ্যক্ষের নেতৃত্বে একটি কমিটি উপবৃত্তির আবেদন যাচাইবাছাই করে। কিন্তু এ কাজটি আজো হয়নি। নির্ধারিত তারিখ শেষ হয়ে গেলে, তারা উপবৃত্তি পাবে না।
কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সোহান বলেন, অধ্যক্ষ স্যার না থাকার কারণে উচ্চমাধ্যমিকের ফরম ফিলাপ কার্যক্রম অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগ না হলে কঠোর আন্দোলন করা হবে।
কৃষি বিজ্ঞানের প্রভাষক মাহবুবুর রহমান জানান, প্রায় চার মাস ধরে অধ্যক্ষ না থাকায় অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ও প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রায় বন্ধ রয়েছে।
সাবেক অধ্যক্ষ আজিজ আহমেদ হুমায়ুন বলেন, আমার বদলির সময় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) ডিজির কাছে কলেজে একজন অধ্যক্ষ নিয়োগের আবেদন করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেন তা করা হলো না তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপ-পরিচালক (কলেজ) ফেরদৌস আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, এসব কলেজের দেখভাল আমরাই করি। তবে সাবেক অধ্যক্ষ নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য মাউশির কাছে আবেদন করেছেন। তিনি একজনকে দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে পরে আবেদনটি যদি করতেন, তাহলে এ জটিলতা হতো না। এরপরেও আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা