৬ মাসেই মেঝে-দেয়ালে ফাটল ও ধস, দুর্ঘটনার শঙ্কা
- মোঃ জাকির হোসেন সৈয়দপুর (নীলফামারী)
- ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের শেষ দিকে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ঢেলাপীর উত্তরা আবাসনে আওয়ামী দলীয় দাপটে ১২১টি ঘর নির্মাণে চরম হরিলুট করা হয়েছে। ইউএনও, লীগ নেতা ও ঠিকাদারের যোগসাজশে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তড়িঘড়ি করে ঘরগুলো তৈরি করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঘর বরাদ্দেও বাণিজ্য চলে। হাতিয়ে নেয়া হয় আরো প্রায় কোটি টাকা। ফলে ঘরগুলো বরাদ্দের মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই দেয়ালে ও মেঝে ধস ও ফাটল ধরেছে।
জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঢেলাপীর আবাসনে সর্বশেষ ১২১টি ঘর নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয় তিন কোটি ৪৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘর নির্মাণ খরচ ধরা হয় দুই লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এসব ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে বলে তখন থেকেই নানা অভিযোগে ওঠে। শিডিউল অনুযায়ী ঘরের ইটের গাঁথুনির ক্ষেত্রে সিমেন্ট ও বালুর মিশ্রণ থাকার কথা এক বস্তা সিমেন্টের বিপরীতে তিন বস্তা বালু। কিন্তু সেখানে এক বস্তা সিমেন্টের বিপরীতে সাত বস্তা বালু দিয়ে মসলা তৈরি করা হয়েছে। তা ছাড়া এক নম্বর ইটের পরিবর্তে ২ ও ৩ নম্বর ইটের মিশেল দেয়া হয়েছে। টিনের চালা দেয়ার ক্ষেত্রেও কাঁচা ও অপরিপক্ব গাছের কাঠ দিয়ে ফ্রেম করা হয়েছে।
মহাসড়কের পশ্চিম পাশের আবাসন এলাকায় প্রায় ১০ ফুট গভীর গর্ত পূরণেও ঘাপলা করা হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত মাটি ভরাট না করে শুধু কলাগাছ ও পৌরসভার আবর্জনা ফেলে তার ওপর সামান্য বালু ফেলে সমতল করা হয়। এরপর কোনোরকম ডাম্পিং না করেই কাঁচা অবস্থায়ই সেখানে নির্মাণ করা হয় ঘর। এতে করে প্রায় ২০-৩০টি ঘর ওই গর্তের ওপর হওয়ায় সেগুলো এখন দেবে গেছে। মেঝেও ফাটল ধরেছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ ঘরেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন উত্তরা আবাসন আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় গেলে বাড়ি নং-৪ এর বাসিন্দা আলাল হোসেনের স্ত্রী নজুফা বলেন, এমনভাবে বাড়ির কাজ করা হয়েছে যে এই অল্প কয়েক মাসেই ঘরের মেঝে দেবে গেছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছি।
একইভাবে ১৭ ও ১৮নং ঘরের বাসিন্দা সবুরের ছেলে অলিউল বলেন, এখানে বিশাল গর্ত ছিল। এই গর্ত পূরণে মাটি না দিয়ে কলাগাছ ও আবর্জনা ব্যবহার করা হয়েছে। আর সেগুলো বসতে না বসতেই ভিত্তি দেয়ায় এখন প্রায় এক ফুট নিচে দেবে গেছে ঘরগুলো। আলগা অবস্থায় ঘর তৈরি করায় পার্শ্ববর্তী সড়ক দিয়ে কোনো হালকা যানবাহন গেলেও ঘরগুলো কাঁপতে থাকে। মনে হয় বুঝি ভূমিকম্প হচ্ছে।
এলাকার আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়ি কুড়িগ্রামে। নদী ভাঙনের কারণে দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর আগে সপরিবারে ঢেলাপীর এলাকায় এসে বসবাস করছি। ঘর নির্মাণের সময় এখানেই রাজমিস্ত্রির কাজ করেছি। তখন দেখেছি ঠিকাদার মুকুলের নির্দেশে মিস্ত্রি এক বস্তা সিমেন্টের সাথে সাত বস্তা বালু দিয়ে মসলা তৈরি করা হয়েছে। এই দিয়েই ঘরের গাঁথুনি ও প্লাস্টারের কাজ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তৎকালীন এসিল্যান্ড আমিনুল ইসলামের কাছে অভিযোগ করায় নির্মাণ ঠিকাদার আমাকে কাজ থেকে বাদ দিয়ে দেন।
ঘরগুলো বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রকৃত ভূমিহীনদের না দিয়ে টাকার বিনিময়ে সচ্ছল ব্যক্তিদেরকে দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নাইটগার্ড বাদশার মাধ্যমে তহসিলদার দিপু এই টাকা নিয়েছে। আমার কাছেও ৬০ হাজার টাকা চেয়েছিল। না দিতে পারায় আমাকে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে ঠিকাদার সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম মুকুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোন কল রিসিভ না করায় তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া তৎকালীন এসিল্যান্ড আমিনুল ইসলাম অন্যত্র বদলি হওয়ায় তাদের মতামত নেয়াও যায়নি। তবে ইউএনও ফয়সাল রায়হান অভিযোগের বিষয়ে বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা ঠিক নয়। বরং নিয়মানুযায়ী সঠিকভাবেই কাজ হয়েছে। প্রয়োজনে তদন্ত করে দেখা যেতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা