২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ ফাল্গুন ১৪৩০, ২২ শাবান ১৪৪৬
`
বুড়িচংয়ের কুসুমপুর উচ্চবিদ্যালয়

প্রধান শিক্ষকসহ ৭টি পদ শূন্য

-

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কুসুমপুর উচ্চবিদ্যালয়ে ১২ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক নেই। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে যোগ্যতাহীন এক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চালানো হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এ ছাড়াও বিদ্যালয়টিতে ইংরেজি, গণিত, বায়োলজিসহ ছয়টি বিষয়ের কোনো শিক্ষক নেই। এতে দিন দিন কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা, উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন অভিভাবকরা।
১৯৯৪ সালে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী এম এ গনি ভূঁইয়া কুসুমপুর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে তিনি-ই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে তার মৃত্যুতে ওই পদটি শূন্য হয়। পরবর্তীতে এই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোসাম্মৎ রাবেয়া সুলতানাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তিনিই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
২০১৯ সালে বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত হয়। এর পর অদ্যাবধি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষক পায়নি বিদ্যালয়টি। নিয়ম অনুযায়ী ১৪ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র আটজন। ইংরেজি, গণিত, বায়োলজি, লাইব্রেরিয়ান, আইসিটি ও চারুকারু এই ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষক নেই। খণ্ডকালীন শিক্ষক ও অন্য বিভাগের শিক্ষকদের দিয়ে কোনোমতে চলছে পাঠদান। শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করেও সারা মিলছে না বলে জানালেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছাম্মৎ রাবেয়া সুলতানা।
এ দিকে অদৃশ্য কারণে দীর্ঘ ১২ বছর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না দেয়া ও পরিপূর্ণ যোগ্যতা না থাকার পরও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান, ২০১৩ সালে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তিনবার প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। কিন্তু এই পদে আবেদন করতে কেউ আগ্রহী না হওয়ায় প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যায়নি।
তবে অদৃশ্য কারণে ২০১৫ সালের পর থেকে অদ্যবধি প্রধান শিক্ষক নিয়োগের কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন কেন প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হচ্ছে না এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া সুলতানা জানান, এটির দায় ও ব্যর্থতা পূর্বের বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির। তিনি বলেন, এমপিও হওয়ার পর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে যেসব যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন তার সেসব নেই। তার পরও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কারণেই তাকে দায়িত্ব পালন করে যেতে হচ্ছে। তিনি যেকোনো সময় প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানান।
রাবেয়া সুলতানা আরো জানালেন, এই বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক আজমল হক বিদ্যালয় থেকে ছুটি কিংবা পদত্যাগ পত্র জমা না দিয়েই ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়া চলে যান। অদ্যাবধি তিনি দেশে ফিরেননি। তিনি এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিচয়ে একটি ব্যাংক থেকে কিছু লোন নিয়ে যান। এ কারণে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় তার পদটি শূন্য ঘোষণা করা যাচ্ছে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ বাকি শিক্ষকের পদগুলো পূরণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য অভিভাবক মো: আবদুল লতিফ সরকার বলেন, জমি দিয়ে, টাকা দিয়ে, শ্রম দিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। কিন্তু বর্তমানে স্কুলের প্রধান শিক্ষক পূর্বের ম্যানেজিং কমিটির হাতের পুতুলের মতো কাজ করছে। আমরা দ্রুত প্রধান শিক্ষকসহ সব শিক্ষক নিয়োগ চাই।
গত ৫ আগস্টের আগে থাকা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল বাশার ভূঁইয়া জানান, পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকার কারণে এই প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক হয়ে কেউ আসতে চান না; যে কারণে ওই পদে নিয়োগ দেয়া যায়নি।
বুড়িচং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মান্নান জানান, বহুবার বলার পরও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেননি। এ বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার জানান, কুসুমপুর উচ্চবিদ্যালয়সহ বুড়িচং উপজেলার কয়েকটি বিদ্যালয়ে এরকম সমস্য রয়েছে। এগুলো তদন্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement