২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ ফাল্গুন ১৪৩০, ২২ শাবান ১৪৪৬
`

জিলাপির কারিগর ঊষার জীবনযুদ্ধ

জিলাপির কারিগর ঊষার জীবনযুদ্ধ -

ছিন্নমূল পরিবারের সন্তান শ্রীমতি ঊষারানী (৬১)। বিয়ের কিছুদিন পরই হারিয়েছেন স্বামীকে। এরপর চোখে-মুখে নেমে আসে অন্ধকারের ছাপ। জীবনযুদ্ধে ছুটছিলেন জীবিকার সন্ধানে।
এরই মধ্যে যোগ দেন একটি থমিষ্টির দোকানে। ফুটপাথের এ দোকানেই ৪১ বছর ধরে গুড়ের জিলাপির কারিগর হিসেবে কাজ করছেন তিনি। এক সময়ে দৈনিক পারিশ্রমিক পেতেন তিন টাকা। এখন পাচ্ছেন ২০০ টাকা। এ দিয়ে বেঁচে আছেন এই নারী।
গত বুধবার গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর বাজারে দেখা যায় ঊষারানী চুলায় লাকড়ি জ্বালিয়ে আপন খেয়ালে গুড়ের জিলাপি তৈরি করছেন। ঊষারানী উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের খামার বাগচি গ্রামের মৃত জগনাথ চন্দ্রের মেয়ে ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হাতিয়া গ্রামের মৃত সুবল চন্দ্রের স্ত্রী।
জানা যায়, ঊষারানীর বয়স যখন ১৯ বছর, তখন তার বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পরই কোলজুড়ে জন্ম নেয় ফুটফুটে একটি কন্যাসন্তান। দাম্পত্য জীবনে চলছিল সুখের সংসার। এরই মধ্যে মারা যায় স্বামী সুবল চন্দ্র। স্বামীর আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় বাধ্য হয়ে বাবার বাড়ি সাদুল্লাপুরে চলে আসেন তিনি।
এক পর্যায়ে সাদুল্লাপুর বাজারের সাহেব উদ্দিন নামে একটি ফুটপাথের মিষ্টির দোকানে কাজ নেন ঊষারানী। তার একমাত্র মেয়ে শিল্পী রানীকে অনেক কষ্টে বিয়ে দেন। বর্তমানে নিজস্ব জায়গা-জমি না থাকায় অন্যের জমিতে কোনোমতে বসবাস করছেন তিনি।
শহিদুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি ঊষারানী এই দোকানে জিলাপি বানান। তার হাতের কারুকার্যে এই জিলাপি অনেকটা মুখরোচক। এই নারীকে কেউ সহযোগিতা করলে নিজেই একটি দোকান দিতে পারতেন।
সাদুল্লাপুর বাজারের মিষ্টির দোকানের বর্তমান মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমাদের দোকানে জিলাপির কারিগর হিসেবে ৪১ বছর ধরে কাজ করছেন ঊষারানী। আমার পুঁজি থাকলে নিজস্ব একটি মিষ্টির কারখানা করতাম।
অসহায় ঊষারানী বলেন, ৪১ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন। জীবন বাঁচানোর তাগিদে এই দোকানে জিলাপির কারিগর হিসেবে কাজ করছি। যা বেতন পাই, কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করছি।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুরের কামারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান এ আর এম মাহফুজার রহমান রাশেদ বলেন, ঊষারানীর ব্যাপারটি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে তাকে সহযোগিতা করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement