ডাকাতের ভয়ে সুন্দরবন যাচ্ছেন না জেলেরা
এক মাসে অপহরণের শিকার অর্ধশতাধিক রাজস্ব আদায়ে ভাটা- সেকান্দার আলী মোংলা
- ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সরকারিভাবে দস্যুমুক্ত ঘোষিত সুন্দরবনে আবারো মাথাচাড়া উঠেছে বনদস্যুরা। এরই মধ্যে চাঁদার দাবিতে কয়েক দফায় বনজীবীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বনদস্যুরা গত এক মাসে অপহরণ করেছে অর্ধশতাধিক জেলেকে। মুক্তিপণ নিয়ে কিছু জেলে ছাড়া পেলেও এখনো অনেক জেলে জিম্মি রয়েছে দস্যুদের কাছে। এমন পরিস্থিতিতে পেশা বদলাচ্ছেন বনজীবীরা। এর ফলে বনবিভাগের রাজ্বস্ব আদায় কমেছে অর্ধেকের নিচে।
একসময় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন ছিলো অপহরণ, ডাকাতিসহ নানা অপরাধের অভয়ারণ্য। তখন প্রায় বনদস্যু বাহিনীগুলোর কাছে জিম্মি হতে হতো জেলেদের। চাহিদামতো চাঁদা দিলে মিলত মুক্তি, আর নয়তো মৃত্যু। ওই সময় অনেক দস্যুর মৃত্যুও হয়েছে ক্রসফায়ারে আবার আহত হয়েছে আইনশৃঙ্ঘলা বাহিনীর সদস্যরা।
২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২টি বাহিনীর প্রধানসহ ৩২৪ জন দস্যু তাদের কাছে থাকা অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল। এর পর ২০১৮ সালে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু গেল ২৭ জানুয়ারি কমান্ড স্টাইলে সুন্দরবনের দুবলারচরসংলগ্ন এলাকায় জেলেদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের জিম্মিকরার চেষ্টা করে বনদস্যু দয়াল বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় জেলেরা অস্ত্রসহ তিন বনদস্যুকে ধরে কোস্টগার্ড সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে।
এর আগে বিছিন্ন ভাবে দু-একজন করে জেলে জিম্মি করলেও এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে পরের দিন ১৫ জেলেকে জিম্মি করে ওই দস্যুরা। অপহরণের ১৭ দিন পর মাথা পিছু দুই লাখ ৮৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯ জন জেলে। ফিরে আসা জেলেরা হলেন অজাহারুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, হাফিজুর রহমান, মো: শাহীনুর আলম, মো: রাসেল, মো: শাহাজান ঢালী, নুরে আলম ও শাহ্ আলম। মুক্তিপণের টাকা দিতে না পারায় এখনো ছয়জনকে আটক রেখেছে ডাকাতরা।
মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়া জেলে শাহীনুর আলম জানান, জিম্মি করে বনদস্যুরা তাদেরকে অনেক মারধর করে। এমন অবস্থায় তারা আর সুন্দরবন যাবেন না বলে জানান তিনি।
মংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের বাসিন্দা জেলে অমৃত বৈরাগী জানান, দস্যু মুক্ত হওয়ার পর এক সময় অনেক জেলে সুন্দরবন যেত নির্ভয়। কিন্তু এখন দস্যুতা শুরু হওয়ায় বর্তমানে তারা পেশা পরিবর্তন করে অন্য কাজ করা শুরু করে দিয়েছেন।
মংলা পৌর শহরের কলেজ রোডের বাসিন্দা আবদুল মজিদ বলেন, তারা গত কয়েক বছর সুন্দরবনে গিয়ে যা আয় করেছেন, তা দিয়ে সংসার চলেছে। কিন্তু বর্তমানে দস্যুতা বেড়ে যাওয়ায় বনে আর যাচ্ছেন না।
বিষয়টি স্বীকার করে কোস্টগার্ড পশ্চিমজোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তারেক আহম্মেদ জানান, তারা অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। কিছু অপরাধীকে আটক করেছেন।
এদিকে পর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা মিল্টন রায় জানান, সুন্দরবনে দস্যুতা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে বলে জেলেরা আমাদের জানিয়েছেন। তাই এখন বনজীবীরা সুন্দরবনে যাচ্ছেন না। তাই রাজ্বস্ব আদায় নেমেছে অর্ধেকের নিচে।
তিনি আরো জানান, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ দিনে চাঁদপাই স্টেশন থেকে ৪৭৮টি পাশ পারমিট দেয়া হয়েছিল বনজীবীদের। আর ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ দিনে সেখানে পারমিট দেয়া হয় মাত্র ২৩৬টি; অর্থাৎ ২৪২টি পাশ কমেছে। এমন অবস্থায় রাজস্ব আদায় কমেছে অর্ধেকের নিচে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা