ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান, আতঙ্কে কমছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি
- আব্দুর রাজ্জাক ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
- ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:০১
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবনে। এতে আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করতে হচ্ছে প্রায় সাড়ে চার হাজার শিশুকে। শ্রেণিকক্ষ সঙ্কটে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুরনো টিনশেড ঘরে কিংবা বারান্দায় ক্লাস নিচ্ছেন। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকায় শ্রেণিকক্ষে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিন কাটে শঙ্কায়। এতে কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। তবে বরাদ্দ না পাওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সংস্কার কিংবা নতুন ভবন তৈরি সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ঘিওর উপজেলায় ১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এগুলো হলো- ঘিওরের সাইংজুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বানিয়াজুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাকজোড় প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঠইমুড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উভাজানী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর তরা প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়বিলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংজুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুস্তা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফুলহারা প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়টিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘিওর আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়, আশাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীধরনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালাচাঁদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাংগালা প্রাথমিক বিদ্যালয় ।
সরেজমিন দেখা যায়, ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নে বাঠইমুড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একতলা ভবনটির বিম ও স্তম্ভের (কলাম) বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। সেখানে মরিচা ধরা রডগুলো বের হয়ে আছে। ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারাও খসে পড়েছে। ভবনটি গত বছরের অক্টোবর মাসে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই মাঝে মধ্যে পাঠদান করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে অতি সম্প্রতি ওই ভবনে পাঠদান কর্মসূচি একেবারেই বন্ধ রয়েছে বলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) খালেদা মঞ্জুর এ খোদা জানান।
সরেজমিন দেখা যায়, বাঠইমুড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি নির্মিত হয় ১৯৭৩ সালে। এখন এর অবস্থা এতটাই জরাজীর্ণ যে, বিদ্যালয় ভবনের দেয়ালে ফাটল এবং ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। দুর্ঘটনার শঙ্কায় ভবনের বারান্দায় চলছে পাঠদান কার্যক্রম। এ বিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে ঘিওর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, বিম ও স্তম্ভে বড় বড় ফাটলের কারণে যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে ভবনটি। এ কারণে এ ভবনে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (প্রস্তাবিত) মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি আবু সোহেল খান বলেন, ভবন বা শ্রেণিসঙ্কটের কারণে কাক্সিক্ষত শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। অথচ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শিশুর শিক্ষার প্রাথমিক ভিত তৈরি হয়। শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিদ্যালয়গুলোর নতুন ভবন নির্মাণ করা জরুরি।
উভাজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত বছর ২৭৬ শিক্ষার্থী ছিল। চলতি বছর কমেছে ৩০ জন। বিদ্যালয়ে দু’টি ভবনে তিনটি শ্রেণিকক্ষ ও একটি অফিসকক্ষ রয়েছে। শ্রেণিকক্ষ সঙ্কটের কারণে পুরনো টিনশেডের ঘরে শিশুদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে। টিনশেড ঘরটিতেও দেয়াল ভাঙা ও টিনের চালায় মরিচা পড়ে ফুটো হয়ে গেছে। বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বৃষ্টি হলে ঘরটিতে পানি পড়ে। নতুন ভবন নির্মাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তবে কোনো সুরাহা হয়নি।
১৯৭৬ সালে টিনশেডে প্রতিষ্ঠিত হয় সাইংজুরী রামেশ্বরপট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। একতলা ভবন নির্মাণ করা হয় ১৯৯৪ সালে। চার কক্ষের এই বিদ্যালয় ভবনের তিনটিতে পাঠদান ও একটি কক্ষে অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ছাদ ও দেয়ালে ফাটল। বছরখানেক আগে কোনোরকমে মেরামত করে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থাতেই পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক এ কে এম আজাদ বলেন, ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হলেও নতুন ভবন এখনো হয়নি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিনা আখতার বলেন, সাত উপজেলার ৬৫০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৬টি ভবনকে ঝুঁকি বিবেচনায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে আগেই। পরিত্যক্ত ভবনগুলোর তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ এখনো আসেনি। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার পর গুরুত্বানুসারে ভবনগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা