সাটুরিয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৭ ঘরের ১৬টিই ফাঁকা
- হুমায়ূন কবীর সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ)
- ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:২৯
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘরে এখন ঝুলছে মরিচা পড়া তালা। জমিসহ ঘর বরাদ্দ পাওয়ার পরেও নানা অসুবিধার কারণে ঘরগুলোতে মানুষের বসবাস নেই। ফলে ঘর ও আঙিনা ফাঁকা থাকায় সেখানে শুকানো হচ্ছে- খড়, গো-খাদ্য এবং গোবরের জ্বালানি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে নির্মিত আধা পাকা ১৭টি ঘর থাকলেও ১৬টি ঘরই এখন জনশূন্য রয়েছে। ফলে লতাপাতা ও বিভিন্ন আগাছায় ভরে গেছে ঘর, আঙিনা ও দেয়াল। যদিও একটি মাত্র ঘরে বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলম বাস করেন; কিন্তু তিনিও বেশির ভাগ সময়ই বাইরে থাকেন। এতে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে নানা ধরনের লোক এসে আড্ডা দেয়, নেশা করে কিংবা আরোসব অপকর্ম করে বেড়ায়। এসব নিয়ে এখন অতিষ্ঠ স্থানীয়রা।
এলাকাবাসী আরো অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় ইউনিয়নের ভূমিহীনদের ঘরগুলো বরাদ্দ না দিয়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের উপজেলার বালিয়াটি এলাকার লোকদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এখানে থেকে তাদের নিজস্ব কর্মস্থানে যোগাযোগের ব্যাঘাত ঘটার কারণে ওই সব সুবিধাভোগীরা বরাদ্দ পাওয়া ঘরগুলোতে থাকেন না। বর্তমানে স্থানীয়রা নিজেদের এলাকার ভূমিহীনদের ঘরগুলো বরাদ্দ দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
সরেজমিন উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের খলিশাডহুরা এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে দেখা যায়, সারি সারি দু’টি কক্ষ বিশিষ্ট রঙিন টিনের চালার ঘরগুলো। সেখানে রান্নাঘর ও শৌচাগার সুবিধা, বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানির জন্য গভীর নলকূপ রয়েছে। সঠিক বিবেচনায় ঘরগুলো বরাদ্দ না দেয়ার ফলে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পটি অকেজো অবস্থায় পড়েছে। নানা অপকর্ম ও অসামাজিক কর্মকাণ্ড ঘটছে সেখানে। ওই ঘরগুলো ২০২০-২১ অর্থবছরে আওয়ামী সরকারের আমলে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে ভূমিহীনদের জন্য নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের কয়েক মাসের মধ্যে ঘরগুলো বরাদ্দপ্রাপ্তদের কাছে বুঝিয়ে দিলেও সেখানে কোনো রুটি-রুজির বা কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ধীরে ধীরে বরাদ্দপ্রাপ্তদের সবাই চলে যান আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে।
এদিকে ঘরের জন্য আবেদন করেও ঘর পাননি খলিশা ডহরা এলাকার হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, ১০-১২ কিলোমিটার দূরের এলাকার লোকদের ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ফলে ওই সব লোক তাদের কর্মস্থান ক্ষেত্র থেকে এখানে এসে বসবাস করতে পারছেন না। এ এলাকায়ও তাদের কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। ঘর বরাদ্দ দেয়ার সময় এ বিষয়টি প্রশাসনের নজর দেয়া উচিত ছিল। তাহলে স্থানীয় ভূমিহীনরা ঘর বরাদ্দ পেতো।
এ বিষয়ে বৃদ্ধ আব্দুল বারেক বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে তার বসতবাড়ি। সেখানকার খাস জমিতে তার ঘর ছিল। প্রকল্প করার সময় তাকে একটি ঘর দেয়ার কথাও ছিল। বার বার প্রশাসনের কাছে আবেদন করার পরও তাকে কোনো ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
তিনি আরো বলেন, ঘরগুলো আমাদের বরাদ্দ দিলে ঘরের দেখাশুনা হতো এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিবেশও ঠিক থাকতো।
খলিশা ডহরা এলাকার বিধবা রোকেয়া বলেন, স্বামী মারা গেছে চার বছর আগে। যে ঘরে বাস করি, সেটিও ভালো না। অপর দিকে এখানে যাদের ঘর দেয়া হয়েছে, তাদের একজন বাদে আর কেউই থাকেন না। অথচ আমাদেরকে ঘরগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
আবাসনে কথা হয় বৃদ্ধ সুজাবের সাথে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত একটা ঘরের জন্য তিনবার আবেদন করেছি। আমাকে ঘর বরাদ্দ না দেয়া হয়েছে বালিয়াটির লোকজনদের। তারা কেউ ঘরে থাকেন না। ঘরগুলো তালা মেরে রেখে নিজেদের অধিকারের বিষয়টি ঠিক রেখেছেন ।
এ বিষয়ে বরাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী মোহাম্মদ আব্দুল হাই বলেন, যেহেতু বরাদ্দপ্রাপ্তরা এখানে থাকছেন না, তাই পরিত্যক্ত ঘরগুলো নতুন করে আমার ইউনিয়নের ভূমিহীনদের বরাদ্দ দেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা