পাথরশ্রমিক নুর আলম ১৭ বছর শিকলবন্দী
অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না পরিবার- তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) সংবাদদাতা
- ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:২৮, আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:২৮
২০০৭ সালে বিএসএফের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে তেঁতুলিয়ায় মহানন্দা নদীর পাথর শ্রমিক নুর আলমের (৩৫) মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে। এ কারণে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না পরিবার। নুর আলম তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের সরদারপাড়া গ্রামের নুর জাহান ও মরহুম হকিকুল হকের ছেলে।
জানা যায়, পাশর্^বর্তী মহানন্দা নদীতে ২০০৭ সালে পাথর ও নুঁড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে ভারতের বিএসএফের হাতে ধরা পড়েন নুর আলম। তাকে বিএসএফের ক্যাম্পে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন ও মারপিটে করে বিএসএফের সদস্যরা। তারপর তাকে পাঠিয়ে দেয় ভারতের শিলিগুড়ি জেল হাজতে। ভারতে তিন বছর জেলবন্দী থাকার পর আরো ৪০ জেলবন্দীর সাথে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়।
নুর আলমের স্ত্রী কহিনুর ও মা নুর জাহান বলেন, ভারতের জেল থেকে এসে নুর আলম পাগলের মতো বকাঝকা করা শুরু করে। তখন তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করানো হয়। এক সময় নুর আলম জানান, ভারতের জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগে তাকে একটি ইনজেকশন পুশ করিয়ে দেয়া হয় শরীরে।
মা নুর জাহান ও স্ত্রী কহিনুরের সন্দেহ, ওই ইনজেকশনের কারণেই নুর আলমের মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছে। হাতের কাছে কাউকে পেলে মারধর করে। এ কারণে তাকে এখন শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়। এ অবস্থায় প্রতিবেশীদের আর্থিক সহযোগিতায় ২০২৬ সালের ৪ নভেম্বর নুর আলমকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পাবনায় চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হতে উঠেন তিনি। কিন্তু অর্থাভাবে সেখানেও চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেননি নুর আলমকে। তার নির্যাতনের ভয়ে অবশেষে স্ত্রী কহিনুর, তিন কন্যা ও এক ছেলেকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী বাপের বাড়ি বকশিপাড়ায় চলে যান।
নুর আলমের মা নুর জাহান বলেন, সেখানে বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। অন্য দুই মেয়ে ও ছোট ছেলে স্কুলে ও মাদরাসায় পড়ে। তিনি জানান, আমার কোনো জমাজমি নেই। বয়সের ভারে পাথর সাইটে কাজ করতে পারি না। বউমা সপ্তাহে দুই-তিন দিন এসে নুর আলমের মলমূত্র পরিষ্কার করে যায়। বাকিটা আমাকেই করতে হয়। আমাকেও মারপিট করে। লোকজনের ক্ষতির ভয়ে হাতের শিকল খুলে দিতে পারি না।
নুর আলমের দুই মেয়ে রোকসা ও নাদিয়া বলে, আমার বাবার চিকিৎসা হলে সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু টাকা অভাবে করাতে পারছি না। তার সুচিকিৎসার জন্য সরকারসহ সবার সুদৃষ্টি কামনা করছি।