০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েও দুশ্চিন্তায় মাকসুদা

বাবা-মায়ের সাথে মাকসুদা আল বারী (মিম) : নয়া দিগন্ত -

লালমনিরহাটের দরিদ্র পরিবারের সন্তান মাকসুদা আল বারী (মিম) এ বছর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও ভর্তি খরচ ও পড়াশোনা এগিয়ে নিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছে তার পরিবার। মাকসুদার বাবা মিজানুর রহমান পেশায় রাজমিস্ত্রি। মা আরিফা আক্তার রিনা কখনো কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। সমাজের বিত্তবানদের কাছে ভর্তির বিষয়ে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন মেধাবী মাকসুদা ও তার পরিবার।
মাকসুদার বাড়ি লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ গ্রামে। তিন বোনের মধ্যে মাকসুদা বড়। মাকসুদা মেধা তালিকায় ৩ হাজার ৩১১তম হয়ে সুযোগ এসেছে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজে পড়ার। মাকসুদা ২০২২ সালে লালমনিরহাট সদরের মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০২৪ সালে একই ইউনিয়নের দুড়ারকুঠি বেগম কামরুননেছা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছেন। স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা তার কাছে বেতন ও টিউশন ফি নিতেন না। এর পাশাপাশি নবম শ্রেণীতে থাকতেই অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের অঙ্ক, ইংরেজিসহ বিজ্ঞান বিষয়ে টিউশনি করিয়েছেন বলে জানান মাকসুদা।
মাকসুদার বাবার ৮ শতকের বসতভিটা আর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১১ শতাংশ জমি নিজের স্থাবর সম্পত্তি বলতে এটুকুই। একটি দুধেল গাভীসহ বাছুর আছে। এটির দুধ বিক্রি করে ও বর্গা নেয়া দুই বিঘা জমিতে আবাদ করে টেনেটুনে সংসার চালান মিজানুর ও আরিফা দম্পতি। মাকসুদার ছোট বোন মারিয়াতুন আল বারী মেঘনা লালমনিরহাট শহরের মজিদা খাতুন সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। আর ছোট বোন মাহমুদা আল বারী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রথম শ্রেণীতে পড়ছে।
মাকসুদার বাবা মিজানুর রহমান বলেন, তিনি মেয়েদের পড়াশোনার খরচ দিতে পারেন না। মেয়েরা টিউশনি করে সবার পড়ার খরচ জোগার করেন। এখন মেডিক্যাল কলেজে তাকে কিভাবে ভর্তি করাবেন ও পড়ার খরচ দেবেন, এসব চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারছেন না। মাকসুদা বলেন, ছোট বেলা থেকে অনেক কষ্ট করে বাধা পেরিয়ে এই পর্যন্ত এসেছি। আমি আর আমার বোন প্রাইভেট পড়িয়ে চলি। মাকসুদা আরো বলেন, টিউশনি করে এতদিন নিজের খরচ চালিয়েছি। কিন্তু মেডিক্যালে পড়ার খরচ জুটবে কিভাবে? আমার সাথে বাবা-মা দুশ্চিন্তায় আছেন।
মাকসুদার সাফল্যে প্রতিবেশী আ: সামাদ বলেন, মাকসুদা সুযোগ পেয়েছে এজন্য আমাদের এলাকারও সুনাম হচ্ছে। আমরা চাই সে আরো ভালো করুক সামনে।
ফুলগাছ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী বলেন, মাকসুদা মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সে তার মেধার প্রমাণ দিয়েছে। সমাজের সামর্থ্যবানরা এগিয়ে এলে মাকসুদা তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। এক দিন চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে পারবে।


আরো সংবাদ



premium cement