০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১, ৫ শাবান ১৪৪৬
`
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন

জামালগঞ্জের শহীদ সোহাগের পরিবারের দিন কাটছে কষ্টে

জামালগঞ্জের শহীদ সোহাগের পরিবারের দিন কাটছে কষ্টে -


‘আমার কানে শুধু রাইফলের গুলির শব্দ শোনা যায়। চোখে ভাসে আমার পুতের গুলিবিদ্ধ লাশ মানুষে ধরাধরি কইরা লইয়া আইতাছে। হাসিনার হুকুমে আমার পুতেরে পুলিশে গুলি কইরা মারছে। আমার সোহাগ কই গেলা রে...।’ এভাবেই কান্নায় ভেঙে পড়েন শহীদ সোহাগের মা রোকেয়া বেগম। জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন জামালগঞ্জের সোহাগ মিয়া (২৩)।
রোকেয়া বেগম বলেন, ‘বাড়ির পাশেই আমার পুতের কবর। সেই কবরের পাশে দিন-রাতে বইসা থাকি, সোহাগরে ডাকি। সোহাগ তো আর কথা কয় না। আমার বুকের কষ্টের কথা আর কার কাছে কইমু। আল্লাহ্ ছাড়া কওয়ার জায়গা নাই।’

জুলাই আন্দোলনে শহীদ হওয়া সোহাগের পরিবারে দিন কাটছে অনাহারে অর্ধাহারে। সুনামগঞ্জে জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের গোলামীপুর গ্রামে চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছেন শহীদ সোহাগ মিয়া। তার কবরের পাশেই উড়ছে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। ছেলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে হাত তুলে মুনাজাত করে কাঁদছেন বাবা আবুল কালাম।
গত ৫ আগস্ট প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় বের হয় বিজয় মিছিল। বিজয়ের সেই সন্ধিক্ষণে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় একটি মিছিলে যুক্ত হয়েছিলেন তারা। মিছিলটি বাড্ডা থানার সামনে এলে পুলিশ গুলি চালায়। সেই মিছিলে দুই ভাই-ই গুলিবিদ্ধ হন। প্রাণ হারান বড় ভাই সোহাগ মিয়া। পর দিন মঙ্গলবার ৬ আগস্ট বেলা ২টায় জামালগঞ্জ উপজেলার হেলিপ্যাড মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতাকর্মীসহ এলাকার হাজারো ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে নিহতের নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর তার গ্রামের বাড়ির পঞ্চায়েতি কবরস্থানে শহিদ সোহাগের লাশ দাফন করা হয়।

ছয় ছেলেমেয়ের বাবা দিনমজুর আবুল কালাম তার তৃতীয় ছেলে সোহাগকে হারিয়ে এখন অসহায়। বার্ধক্যের কারণে কাজকাম করতে পারেন না। অন্যের জমি চাষ ও দিনমজুরি করছেন। মা রোকেয়া বেগম ছেলেদের সাথে ঢাকায় থাকতেন। অভাবের কারণে সন্তানরা পড়াশোনা করতে পারেনি। গোলামীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন সোহাগ। এদিকে তৃতীয় ভাই শুভ গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গু হয়ে গেছেন। বড় ভাই বিল্লাল মিয়া, চতুর্থ ভাই যুবায়ের মিয়া ও পঞ্চম ভাই আজিম মিয়া এখনো কর্মক্ষম হয়ে ওঠেনি। তারা রাজমিস্ত্রীর কাজ শিখছেন।
শহীদ সোহাগের বাবা জানান, সোহাগকে বিদেশে পাঠানো জন্য কভিটের সময় অনেক টাকা ঋণ করেন তিনি। কিন্তু সোহাগকে বিদেশে পাঠাতে পারেননি। দালালদের হাতে সব টাকা গচ্চা গেছে। এখন ঋণের বোজা বহন করছেন বাবা।

গুলিবিদ্ধ শুভ বলেন, ‘সবার সাথে আমরাও মিছিলে যোগ দেই। মিছিলটি বাড্ডা থানার সামনে গেলে পুলিশ গুলি করে। সেখানে অনেকের মতো আমাদের দুইজনের শরীরেও গুলি লাগে। ভাই (সোহাগ) সেখানেই মারা যায়। অন্যরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে দেয়। তিনি বলেন, হাসপাতালে সার্মথ্য অনুযায়ী চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি চলে আসি। এখনো পায়ে দু’টি গুলি রয়ে গেছে। আগের মতো কাজ করতে পারি না। টাকা-পয়সার অভাবে অপারেশন করে গুলি বের করতে পারছি না।’
এক শতক জায়গায় ওপর একটি ভাঙাচোরা ঘরে বসবাস শহীদ সোহাগের পরিবারের। জং ধরা টিন, বাঁশের এই ঘরটির চালা ফুটো। বৃষ্টি হলে ঘরে থাকা দায়। সরকারের কাছে প্রতিবেশীদের দাবি, গুলিবিদ্ধ ছেলে শুভ মিয়ার উন্নত চিকিৎসা ও পরিবারের জন্য মাথা গোঁজার করে দেয়ার।


আরো সংবাদ



premium cement