ফুলবাড়ীতে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে বোরো চারা রোপণের ধূম
- শেখ সাবীর আলী ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
- ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৫১
উত্তরের জেলা দিনাজপুরে গত কয়েক সপ্তাহ থেকে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে দুপুরে অল্পসময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিললেও তেমন তাপ অনুভূত হচ্ছে না। শীতের দাপটে কাঁপছে পুরো এলাকার মানুষ। কনকনে শীত, হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে শীত উপেক্ষা করে বোরো ধানের চারা রোপণ এবং জমি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার চাষিরা।
গত বুধবার সকাল ৬টায় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস। এর আগে গত সোমবার ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গত মঙ্গলবার এ জেলায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল।
এমন তীব্র শীত আর ঘনকুয়াশাকে উপেক্ষা করেই জমি তৈরি ও বোরো ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলবাড়ী উপজেলার চাষিরা। কৃষকদের আশা, আবহাওয়া ভালো থাকলে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হবে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাজারে ধানের দাম কিছুটা বেশি থাকায় উপজেলায় ইরি-বোরো ধান চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। ফলে শীত উপেক্ষা করে উপজেলাজুড়েই ব্যাপক হারে ধান চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
সরজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কাক ডাকা ভোর থেকে ঘনকুয়ার মধ্যেই শীত উপেক্ষা করে চাষিরা শ্যালো মেশিন কিংবা পাম্পের সাহায্যে জমিতে পানি সেচ দিয়ে ধান রোপণের জন্য জমি উপযোগী করে তুলছেন। কেউ ট্রাক্টর বা কাল্টিভেটর, ছোট পাওয়ারট্রিলার দিয়ে জমি চাষ করে ইরি-বোরো রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। কোথাও বীজতলা তৈরি ও জমিতে রোপণের জন্য ধানের চারা উত্তোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। ধানের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান চাষে আগ্রহ বেড়েছে বলে জানান উপজেলার চাষিরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে।
সূত্র মতে যেসব জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করা হচ্ছে, তার সার্বিক পরিচর্যার জন্য কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। যেসব কৃষক আমন ধানকাটার পর আলু বা সরিষা চাষ করেননি, তারা সেসব জমিতে আগাম বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন। ইরি বোরো ধানের মধ্যে কৃষি বিভাগের নতুন উদ্ভাবন করা ভ্যারাইটি হাইব্রিড ও উফশী জাতের ধান এবার বেশি আবাদ করেছেন। এ ছাড়া নতুন ভ্যারাইটি হিরা-১, হিরা-২, সোনার বাংলা, ব্রি-ধান ২৮, ব্রি-২৯, ব্রি-৮১, ব্রি-৭৪, ব্রি-৮৯ ধানসহ স্থানীয় জাতের কিছু ধান চাষে চারা বেশি রোপণ করা হচ্ছে।
উপজেলার শিবনগর, কড়াইপাড়া, এলুয়াড়ী, সরস্বতিপুর গ্রামগুলোতে দেখা যায়, ইরি-বোরো রোপণ শুরু করছেন চাষিরা। মাঠে মাঠে পুরোদমে বোরো ধান রোপণ শুরু হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ বছর জমিতে তারা বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ করছেন। অনেকে শ্রমিকের সাথে নিজেরাও বোরো ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত রয়েছেন।
কড়াইপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল ফজল, নুরু মিয়া জানান, আমরা কৃষক জমির ফসল দিয়েই আমাদের চলতে হয়। সময়মতো ধান চাষ না করলে চলব কি করে। তাই তিব্র শীত উপেক্ষা করেই মাঠে কাজ করতে হচ্ছে। শীতে ঠাণ্ডা পানিতে কাজ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে, তবুও উপাই নেই। মাঝে মধ্যে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছি। জমি চাষ করে সার ও পানি দিয়ে বোরো রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করছি। বীজতলা থেকে চারা এনে সেই জমিতে রোপণ করব। কিছু জমিতে চারা রোপণ শেষ হয়েছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, বোরো ধান রোপণ শুরু থেকে কাটা ও মাড়াই পর্যন্ত সময় লাগে ৯০ দিন। উপজেলায় সবে মাত্র রোপণ শুরু হয়েছে। বোরো রোপণ চলবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবং কোন প্রকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার বোরোর বাম্পার ফলনের আশা করছেন এই কর্মকর্তা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা