০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১, ১ শাবান ১৪৪৬
`

দামুড়হুদায় শত বছরের নাটুদার ‘হাজার দুয়ারি’ বিদ্যালয়

দামুড়হুদায় শত বছরের নাটুদার ‘হাজার দুয়ারি’ বিদ্যালয় -


চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার নাটুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয় শত বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী। ভবনটিকে বলা হয় হাজার দুয়ারি ভবন। এতে রয়েছে মূলত আড়াই শো দুয়ার বা দরজা। প্রায় এক শো বছর আগে জমিদার নফল চন্দ্র পাল চৌধুরী নিজ সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিদ্যালয়টি। দামুড়হুদা উপজেলার নাটুদা গ্রামের এই মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত।
শত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই বিদ্যালয়টি। স্কুলে জমির পরিমাণ ৯ একর ১২ শতক। এর পূবে সুশীতল ছায়াঘেরা একটি আমবাগান এবং সামনে খেলার মাঠ রয়েছে। বিদ্যালয়ের পাশর্^বর্তী এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা জমিদার নফল চন্দ্র পালের পতœীর নাম ছিল রাধা রানী। অতি মানবদরদি হিসেবে তার খ্যাতি ছিল আকাশ চুম্বি। এ অঞ্চলের দরিদ্র ও অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার বাসনা থেকে তিনি তার স্বামী নফল চন্দ্রকে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে দেয়ার জন্য পরামর্শ দেন।
তার অনুপ্রেরণায় ১৯০৬ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। মাটির অনেকটা গভীর থেকে ৪ ফুট চওড়া দেয়াল গেঁথে তোলা হয়। এরপর ওপরের দেয়াল গাঁথা হয় দুই ফুট পুরুত্বে। অভিজ্ঞ কারিগর দিয়ে চুন-সুরকিতে নির্মিত হয়েছিল ভবনটি। প্রতিটি ইটে জমিদার নফল চন্দ্র পালের নামের আদ্যক্ষর খোদাই করা আছে। জমিদারের স্ত্রীর স্মৃতি রক্ষা করতে তার নামানুসারে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় শ্রী রাধা রানী ইনস্টিটিউশন।

প্রথমে বিশাল আকৃতির ভবনের পশ্চিম দিকে দক্ষিণমুখী কয়েকটি কামরার একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবনের একটি কক্ষ ছাত্রাবাস হিসেবে রেখে অন্যগুলোতে একাডেমিক কার্যক্রম চালানো হয়। বিদ্যালয় ভবনটি চারতলা হওয়ার কথা ছিল। প্রথম তলায় ২৫০টি দরজা এবং ওপরের তিন তলায় আরো ৭৫০টি দরজার পরিকল্পনা থাকায় ভবনটির নামকরণ করা হয় হাজার দুয়ারি ভবন। কিন্তু ভবনের এক তলা পর্যন্ত নির্মিত হওয়ার পর এর নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যালয়ের বড় ভবনের কাজ থমকে যাওয়ায় এই ভবনটি প্রত্যাশিত হাজার দুয়ারে রূপান্তরিত হতে পারেনি। এরপরও লোকজন একে হাজার দুয়ারি ভবন বলেই জানে। এ অঞ্চলের জমিদার পরিবারগুলো দেশ বিভাগের আগে ও পরে এ দেশ ছেড়ে চলে যায়। এটিই ভবনের নির্মাণকাজ থেমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়।
দেশ বিভক্তির পর হিন্দু শিক্ষকরা দেশ ত্যাগ করে চলে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির পাঠদান কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিল। পরে স্থানীদের প্রচেষ্টায় ১৯৫৮ সালে একতলা ভবনের ছাদ নির্মাণ করে বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয় এবং ছোট একটি ভবন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়।
এ সময় প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আসেন দামুড়হুদার হরিরামপুর গ্রামের সুরাত আলী। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান বেশ উন্নত হয়। এ সময় স্কুলটির নামকরণ করা হয় নাটুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় পাকিস্তানি সেনারা ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করায় স্কুলটির বেশ ক্ষতি হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তৎকালীন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি হাজি মোজাম্মেল হক স্কুলটির উন্নয়নকল্পে একাধিকবার বিপুল অঙ্কের অনুদানের ব্যবস্থা করে দেন।
বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান জানান, ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি কলকাতা শিক্ষা বোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে। আশপাশে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে বহু ছাত্র এখানে এসে মেসে থেকে এই শিক্ষায়তনে লেখাপড়া করে। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রথম ব্যাচ প্রবেশিকা পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পায় ১৯১১ সালে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল