রূপগঞ্জে সেচের পানির অভাবে বোরো আবাদ ব্যাহত
- শফিকুল আলম ভূঁইয়া রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
- ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সারা দেশে বোরো ধান রোপণের ধুম পড়েছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চিত্রে দেখা দিয়েছে ভিন্ন রূপ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ শুকিয়ে গেছে সেচের পানির অভাবে। নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদাসীনতায় প্রতি বছর হাজার হাজার মণ ধান উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এ এলাকায়। এ কারণে কৃষকরা ধান আবাদে নিরুৎসাহী হয়ে পড়েছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়ার দাবি জানান প্রান্তিক কৃষকরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রূপগঞ্জে নারায়ণগঞ্জ নরসিংদী সেচ প্রকল্প ব্লক-১ এর আওতায় উপজেলার তারাবো পৌরসভা, কাঞ্চন পৌরসভা, মুড়াপাড়া, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমিতে সেচের পানির অভাবে দেড় সহস্রাধিক হেক্টরের অধিক কৃষি জমি শুকিয়ে ফাটল দেখা গেছে। ধানের বীজ তলা শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে। পানি না পেয়ে কৃষকরা হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কৃষকরা দ্রুত সেচের পানি ছাড়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্প-ব্লক ১ এর তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে ৯০ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্প ব্লক-১ নির্মাণ করা হয়। হাটাবো দক্ষিণ বাড়ৈপাড় এলাকার কৃষক শাহ-আলম বলেন, পাউবো আমাদের ঠিক মতো পানি দেয়না। আমরা কার্তিক মাসে বীজতলা প্রস্তুত করলেও রোপণ করতে পারছিনা। পৌষ মাসে যদি সেচের পানি ছেড়ে দিতো বিঘা প্রতি ২০/২৫ মণ ধান হতো। পানি পাইনা বিধায় জমিগুলো ফাইটা যাইতাছে।
কৃষক বাবুল মোল্লা বলেন, সরকার কৃষি খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে কৃষকের ফসল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য। কিন্তু পাউবোর কিছু সরকারি কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও গাফিলতির জন্য কৃষি জমিতে এখনো সেচের পানি ছাড়া হয়নি। সঠিক সময়ে সেচের পানি ছাড়লে প্রতিবিঘা জমিতে ২৫/৩০ মন ধান পাইতাম। অসময়ে পানি ছাড়লে আমরা ১০/১২ মণ ধানও পাইতাম না। তা-ছাড়া তারাবো পৌরসভা, গোলাকান্দাইল, ও ভুলতা এলাকার সেচ খালের মুখ পাইপ দিয়ে বন্ধ করার কারণে ফসলি জমিতে কৃষক পানি পাচ্ছে না।
কৃষক মোতাহার হোসেন বলেন, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্পের আওতায় কৃষি জমিতে মাঘ মাসের শুরুতে সেচের পানি ছাড়ার কথা থাকলেও দায়িত্বরত কর্মকর্তারা রহস্যজনক কারণে এখনো সেচের পানি ছাড়েনি। আমাদের চোখের পানিতে বুক ভাসলেও সেচের পানিতে ফসলি মাঠ ভাসে না।
কৃষক রহিম মিয়া বলেন, বোরো মৌসুম শুরু হয় মাঘ মাসের প্রথমে। আমরা পৌষ মাসে বীজতলা প্রস্তুত করে পৌষের শেষ থেকে মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহে চারা রোপণ শেষ করে ফেলি। কিন্তু কয়েক বছর ধরে পাউবোর তালবাহানায় সঠিক সময়ে সেচের পানি পাই না।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার আফরোজা সুলতানা বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে রূপগঞ্জে পাঁচ হাজার দুই হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে দুই হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। বাকি দুই হাজার পাঁচশ হেক্টর জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ প্রকল্পের আওতাধীন রয়েছে। পাউবো সেচের পানি না ছাড়ার কারণে আমাদের চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। কৃষকরা প্রতিনিয়তই আমাদের কৃষি অফিসে যোগাযোগ করছেন পানি ছাড়ার বিষয়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের কোনো রকম সহযোগিতা করছেন না।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো: রকিবুল আলম রাজিব বলেন, গত বছর সেচ খাল খননের জন্য বরাদ্দ পেয়েছি আড়াই কোটি টাকা এবার এক কোটি টাকা আমরা সেচ খালের জন্য বরাদ্দ পেয়েছি। অল রেডি এ বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে আলোচনা করেছি। টেন্ডার জটিলতায় ক্যানেল ও খালগুলো খনন করা হয়নি।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, কৃষকদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের যে ক্যানেলগুলো রয়েছে সেখানে পানি ছাড়া হচ্ছে না। পাউবো বলেছে প্রশাসনিক জটিলতায় দেরিতে অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে। এ জন্যই আমরা উপজেলা প্রশাসন থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি আগামী ১০ দিনের মধ্যে যেন এ পানি ছাড়া হয় এবং পরবর্তী বছরগুলোতে যেন বোরো মৌসুমের পূর্বেই টাকাটা ছাড় করা হয় যাতে করে কৃষকরা পানির সুফল ভোগ করতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা