খুলনায় হত্যা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধিতে আতঙ্কে নগরবাসী
- শেখ শামস্দ্দুীন দোহা খুলনা ব্যুরো
- ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:২৩, আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:২৩
- জামিনে মুক্তি পেয়ে বেপরোয়া সন্ত্রাসীরা
- নগরীর সব থানার ওসির অপসারণ দাবি
খুলনায় হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে নগরবাসী। জুলাই বিপ্লবের পর সন্ত্রাসীরা জামিনে মুক্ত হয়ে একের পর খুন, আধিপত্য বিস্তার, পেশি শক্তি প্রদর্শন, মাদক সিন্ডিকেট, অবৈধ দখল, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। প্রশাসনের নজরদারি সত্ত্বেও কেন এমনটা ঘটছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে নগরবাসী।
গত ২৪ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকারকে। এর আগের দিন ২৩ জানুয়ারি সকালে খুলনায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মন্টু শেখ নামে বিএনপির এক কর্মীর দুই চোখ ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে উপড়ে ফেলার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। এর আগে ২০ জানুয়ারি খুলনায় মানিক হাওলাদার নামে যুবদলের সাবেক নেতা দুবৃর্ৃৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। তিনি ২১ নং ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। ওই দিন সন্ধ্যায় কমার্স কলেজ রোডে নওফেল নামে এক ছাত্রদল কর্মীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সজীব শিকদার নামে এক যুবককে গুরুতর আহত করা হয়।
গত ৯ জানুয়ারি খুলনার চরমপন্থীদের পরিকল্পনায় কক্সবাজারে পরিকল্পিতভাবে খুন হন খুলনা সিটি করপোরেশনের ৪ নং ওয়ার্ডের অপসারিত কাউন্সিলর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গোলাম রব্বানি টিপু। ১৩ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর মিয়াপাড়া বন্ধনের মোড় এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে আকাশ নামে এক যুবক আহত হন। ১২ ডিসেম্বর রাত পৌনে ৮টার দিকে নগরীর জিরোপয়েন্ট এলাকার মেসার্স সিকদার ফিলিং স্টেশনের সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রেজা শেখ নামে এক যুবকের পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেয় সন্ত্রাসীরা। ৬ ডিসেম্বর রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইমরান হোসেন মানিক নামে এক যুবক আহত হন। ৩ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে নিরালা এলাকায় ১০-১৫টি মোটরসাইকেলে এসে একদল সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে। এতে পথচারী ইউনুস শেখ গুলিবিদ্ধ হন। এরপর সন্ত্রাসীরা চানমারি এলাকায় গিয়ে সেখানেও কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে এবং আব্দুল আহাদ হাওলাদার নামে এক যুবককে কুপিয়ে আহত করে।
গত ২৯ নভেম্বর রাতে টুটপাড়া এলাকায় সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আমিন মোল্লা বোয়িংকে গুরুতর আহত করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। এর আগে বসুপাড়া এলাকায় গত ৫ নভেম্বর রাতে অস্ত্রধারীরা রফিকুল ইসলাম মুক্তা নামে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে। ২ নভেম্বর রাতে আলকাতরা মিল এলাকায় সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে পঙ্গু রাসেল নামে এক সন্ত্রাসীকে হত্যা করে। এ সময় সজীব ও ইয়াসিন নামে দুই যুবককে কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। একই রাতে নগরের বাবু খান রোডে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান বেলালকে আহত করে।
গত ২৮ অক্টোবর দুপুরে সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও বোমা ফাটিয়ে দৌলতপুর থানার কালীবাড়ি বাজারে দত্ত জুয়েলার্সে ডাকাতি করে। তারা জুয়েলার্স থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও দুই লাখ টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। ২১ অক্টোবর রাতে কয়রা উপজেলার কাটাখালী গ্রামে পুলিশের ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা অপহরণ মামলার আসামি হারুন গাজীকে ছিনিয়ে নেয়। তাদের হামলায় পাঁচ পুলিশ সদস্যও আহত হন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ আহসান হাবীব বলেন, খুলনায় সংঘটিত খুনের ঘটনায় আসামিরা গ্রেফতার হচ্ছে। যারা এখনো গ্রেফতার হয়নি, তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। গত ১৯ জানুয়ারি কেএমপির সদর দফতরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, সর্বোপরি নিরাপদ খুলনা গড়ার প্রত্যয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানান কেএমপি কমিশনার মো: জুলফিকার আলী হায়দার।
এ দিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে ব্যর্থ হওয়ায় খুলনা মহানগরের সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানিয়েছে খুলনা মহানগর বিএনপি। খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব বাবুল হাওলাদার বলেন, খুলনায় জামিনে মুক্তি পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীরা। আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটছে। এভাবে চলতে থাকলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে। অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারসহ পরিস্থিতি উন্নয়নে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা