৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১, ২৯ রজব ১৪৪৬
`

চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার

চুয়াডাঙ্গায় নির্মাণাধীন শ্রীকোল বোয়ালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন : নয়া দিগন্ত -


চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শ্রীকোল বোয়ালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বমুখী ভবন নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ঠিকাদারের যোগসাজশে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে ভবন নির্মাণ করার অভিযোগে গ্রামবাসী প্রতিবাদ জানিয়েছে।
জানা গেছে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের অধীন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শ্রীকোল বোয়ালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চারতলা ভবন নির্মাণের কাজ পায় কুষ্টিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আনোয়ার আলী। গত ৫ আগস্টের পর ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে চলে যায়। পরবর্তীতে গত কয়েকদিন আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুয়াডাঙ্গার শাকিল নামে একজন কাজ শুরু করেন। এক কোটি ৮৭ লাখ ৭৭০ টাকা ব্যয়ে এক থেকে তিনতলা পর্যন্ত বিল্ডিং নির্মাণ ও সংস্কারের কাজের শুরুতেই নিম্নমানের ইট, বালু ও রডের ব্যবহার দেখে গ্রামবাসী প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষক ওসমান গনি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শাকিল আহমেদ বিষয়টি ভিন্নখাতে নিতে প্রচারণা চালায়, বিএনপির লোকজন চাঁদা দাবি করায় কাজ করতে পারছেন না।

গত বৃহস্পতিবার নিম্নমানের ইট ও খোয়া ব্যবহারের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধান শিক্ষককে কাজ বন্ধ করার জন্য শ্রীকোল ও বোয়ালিয়া গ্রামের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা উপস্থিত হন। এ সময় শিক্ষক ওসমান ইট ও খোয়া ফেরত দিয়ে নতুন করে ইট এনে কাজ করা হবে বলে গ্রামবাসীকে জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় অভিযোগ করে বলেন, ‘মূলত প্রধান শিক্ষক ওসমান ঠিকাদারের সাথে আঁতাত করে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছেন। তার প্রতিবাদ করায় শিক্ষক ও ঠিকাদার প্রচারণা চালায় স্থানীয় বিএনপি নেতারা তাদের কাছে চাঁদা দাবি করায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখানে দলীয় কোনো বিষয় নেই, বরং প্রধান শিক্ষকের ঝামেলা আছে।’
প্রধান শিক্ষক ওসমান গনির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আর কোনো নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হবে না। আর ঠিকাদার আমার অজান্তেই নিম্নমানের ইট ও খোয়া এনে কাজ করছে।’ চাঁদা দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শুনেছি অনেকেই ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবি করেছে। শ্রীকোল গ্রামের ইলিয়াস নামে একজন নাকি ১০ হাজার টাকাও নিয়েছে। সত্য-মিথ্যা জানি না।’ এ বিষয়ে শাকিলের কাছে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদি নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়, তাহলে নিউজ করে দেন। আর চাঁদা দাবির বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’

এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আরো অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, মূলত প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের জন্য যে ইট, খোয়া ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হবে, তা প্রধান শিক্ষক ওসমান নিজে সরবরাহ করবেন বলে যোগসাজশ করে কাজ করছেন। সরোজগঞ্জের একটি ভাটা থেকে নিম্নমানের ইট নিয়ে এসে কাজ করছেন। প্রধান শিক্ষক ও ঠিকাদার তাদের দুর্নীতি ঢাকতেই মূলত চাঁদাবাজির গল্প প্রচার করছে। যাতে সাধারণ মানুষ বিষয়টি ভিন্নখাতে নেয়। তদন্তপূর্বক ভবন নির্মাণ বন্ধসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
কুষ্টিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আনোয়ার আলীর পক্ষের কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিয়োজিত শাকিল নামের ওই ব্যক্তির সাথেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের চুয়াডাঙ্গা সদরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেন, আমি মঙ্গলবার সরেজমিনে পরিদর্শন করে ইট, বালু, খোয়া ও রড যে নি¤œমানের তার প্রমাণ পেয়েছি। একদিনের এসব মালামাল সরিয়ে ফেলতে ঠিকাদারদের নির্দেশ দিয়েছি। কাজ আপাতত বন্ধ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ নতুন করে ভালো মালামাল দিয়ে কাজ না করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে ।

 


আরো সংবাদ



premium cement