২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৫ রজব ১৪৪৬
`

জাজিরায় কৃষকের স্বপ্ন পূরণে মিরাশার চাষি বাজার

জাজিরা উপজেলার মিরাশার চাষি বাজার : নয়া দিগন্ত -


কৃষকদের ঘাম ঝরানো ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০০৮ সালে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নে শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কের পূর্ব পাশে গড়ে তোলা হয় ‘মিরাশার চাষি বাজার’। মিরাশার চাষি বাজার বহুমূখী সমবায় সমিতি লিমিটেড পরিচালিত এ বাজারটি সময়ের সাথে হাঁটি হাঁটি পা পা করে ১৭ বছর ধরে এ অঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন পূরণের এক বড় মাধ্যম। এ বাজারে আসা কৃষকদের উৎপাদিত কিছু কিছু সবজি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। সবজি মৌসুমে এ বাজারে প্রতিদিন প্রায় তিন কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। কোন মধ্যস্বত্বভোগী না থাকায় কৃষকদের কাছ থেকে কোনো খাজনা নেয়া হয় না এ বাজারে। ফলে কৃষকরা এখন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ভালো দাম পেয়ে অনেক বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষকের উপস্থিতিও বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতা ও উপজেলা প্রশাসন ও সমবায় কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে মাত্র ৩২ শতক জমির ওপর বাজারটির পথচলা শুরু করলেও ১৭ বছরের ব্যবধানে পরিধি এখন তিন একরে পৌঁছেছে। বাজারে এখন সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে শতাধিক ঘর। পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকার সাথে সহজ যোগাযোগ স্থাপনের ফলে চার ঘণ্টার ব্যবধানে জাজিরার সবজি পৌছে যাচ্ছে দেশের অন্যতম পাইকারি আড়ত কাওরানবাজারে। ফলে সবজি নষ্ট হচ্ছে না বললেই চলে। বছরে এ বাজারে এখন ৫০০-৬০০ কোটি টাকার সবজি বেচাকেনা হয়।

জেলা কৃষি বিভাগ বলছেন, মিরাশার চাষি বাজারটি কেবল কৃষকদেরকেই সমৃদ্ধ করছে না, পদ্মা সেতুর সুফলকে কাজে লাগিয়ে কৃষি বাণিজ্যিকীকরণকেও এগিয়ে নিয়েছে বহুদূর।
মিরাশার চাষি বাজারের অন্যতম পাইকার রতন কাজী বলেন, এ বাজারের করল্লা, বেগুন, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটোলসহ নানা সবজি নিয়মিত বেচাকেনা হয়। এসব সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়েও পাশের মাদারীপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, ভোলা, সিলেটসহ কাওরানবাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে যাচ্ছে। ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতিদিন এখানে তিন কোটি টাকারও বেশি বেচাকেনা হয়। বাকি ছয় মাসেও এখানে প্রতিদিন সবজি বেচাকেনা হয়।

মুলনা ইউনিয়নের খানকান্দি গ্রামের কৃষক কামাল বলেন, মিরাশার চাষি বাজার আমাদের স্বপ্নের নায়ক। বাজারটি চালু হওয়ার আগে দালালদের (মধ্য সুবিধাভোগী) দৌরাত্ম্যের কারণে আমরা অনেক সময়ই ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতাম। বাজারটি চালু হওয়ার পর থেকে সহজেই ভালো দামে বিক্রি এবং লাভও বেশি হচ্ছে।
মিরাশার চাষি বাজার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক খোকন খালাসি বলেন, চালু হওয়ার পর থেকেই বাজারের বিক্রেতা ও ক্রেতাদের হয়রানি বন্ধে কমিটি কঠোর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। বাজারের নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের সার্বিক সহায়তা গ্রহণ করছি।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোস্তফা কাামাল হোসেন বলেন, কৃষকবান্ধব মিরাশার চাষি বাজারটি কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্যের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। নিরাপদ কৃষিপণ্য উৎপাদনে আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদেরকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করে আসছি। এ ছাড়াও বাজার ব্যবস্থাপনার বিষয়েও আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করছি। বাজারটি জেলার কৃষি অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement