আমতলীতে একই গ্রামে ৪টি ইটভাটা হুমকিতে জীববৈচিত্র্য ও ফসলি জমি
- আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা
- ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
জেলা প্রশাসন, কৃষি অধিদফতর ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিয়েই লোকালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এবং তিন ফসলি কৃষি জমিতে চারটি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ওই এলাকার অন্তত পাঁচশ’ একর তিন ফসলি জমি এবং পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ইটভাটার কারণে ফসলি জমির উর্বরতা ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ফলে তেমন ফসল হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী কৃষকদের। দ্রুত ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। আর ইটভাটা চারটি আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা গ্রামে। তবে প্রশাসন ওই চারটি ইটভাটাতে অনুমতি দেয়নি বলে দাবি করেছেন।
বিবিসি ইটভাটার মালিক মো: হান্নান মৃধা বলেন, জিকঝ্যাক ইটভাটাতে ইট প্রস্তুত করছি। এখন আর কৃষি জমি ও পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরো বলেন, আমার এ ইটভাটাটি জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সব দফতরের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। তারা ইটভাটা নির্মাণের অনুমতি দিয়েছেন।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার রায়বালা গ্রামে ২০১৭ সালে আব্দুল হান্নান মৃধা বিবিসি, ২০১৮ সালে বিবিসি ইটভাটার ৩০০ গজ দূরে শানু হাওলাদার ফাইভস্টার, ২০১৯ সালে ওই দুই ইটভাটার পাশাপাশি মাহবুবুল আলম মৃধা এমএমবি এবং ২০২১ সালে একই স্থানে নুর জামান এডিবি নামে ইটভাটা নির্মাণ করেছেন। ফসলি জমি নষ্ট করে এ ইটভাটা চারটি গড়ে উঠেছে। ওই ইটভাটা চারটিতে জেলা প্রশাসন, কৃষি অধিদফতর ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই। আধা কিলোমিটারের মধ্যে চারটি ইটভাটা নির্মাণ করায় ওই এলাকার অন্তত ৫০০ একর তিন ফসলি জমি, গাছপালা, জীববৈচিত্র্য, প্রাণী সম্পদ, খামার, গ্রামীণ সড়ক নষ্ট ও পরিবেশ দূষিতসহ পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
তবে ইটভাটার মালিকরা দাবি করছেন জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি অফিসার ও পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে অনুমতি দিয়েছেন।
কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, ওই ইটভাটা চারটির ৫০০ গজের মধ্যে রয়েছে রায়বালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহিষকাটা নেছারিয়া দাখিল মাদরাসা, এতিমখানা ও ইবতেদায়ী মাদরাসা। অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইনে উল্লেখ আছে, আবাসিক এলাকা, তিন ফসলি কৃষি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। ওই আইন লঙ্ঘনে এক বছর অনধিক পাঁচ বছরের জেল অথবা আর্থিক জরিমানার বিধান রয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বিবিসি, ফাইভস্টার, এডিবি ও এমএমএস ইটভাটার পাশে ঘনবসতি ঘরবাড়ি, গাছপালা, তিন ফসলি জমি, রায়বালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এতিমখানা ও ইবতেদায়ী মাদরাসা। চারটি ইটভাটাতে দেদার ইট পোড়ানোর কাজ চলছে। এডিবি ইটভাটার মালিক নুর জামাল বলেন, প্রশাসনের সব দফতরের অনুমতি নিয়েই ইটভাটা নির্মাণ করেছি। প্রশাসন কিভাবে লোকালয়ে ইটভাটা নির্মাণের অনুমতি দিলো এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তিনি।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার ঈশা ইকবাল বলেন, রায়বালা এলাকায় কোনো ইটভাটা স্থাপনে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপনে আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে, অন্য দিকে ফসল ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বরগুনা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক হায়াত মাহমুদ রকিব বলেন, রায়বালা গ্রামে কোনো ইটভাটা স্থাপন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, সরকারি নিয়মবহির্ভূত কোনো ইটভাটা নির্মাণ করা হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ওই ইটভাটাগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা