২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ মাঘ ১৪৩১, ২২ রজব ১৪৪৬
`
চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউট

৫টি চেয়ার মেরামতে বিল উত্তোলন ৬২ হাজার টাকা

৫টি চেয়ার মেরামতে বিল উত্তোলন ৬২ হাজার টাকা -


একের পর এক বেরিয়ে আসছে চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র। এবার আরো ভয়াবহ অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। মাত্র পাঁচটি চেয়ার মেরামতে খরচ তুলে নেয়া হয়েছে ৬২ হাজার ২০০ টাকা। কয়েকটি টেবিল, বেঞ্চ ও খাট মেরামতে কাগজে-কলমে খরচ দেখানো হয়েছে আরো ৫৮ হাজার ১১৯ টাকা। মাত্র কয়েকটি আসবাবপত্র মেরামতে এক লাখ ২০ হাজার ৩১৯ টাকা খরচ দেখিয়ে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে।
এমন অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়টি জানাজানির পর সবার চক্ষু চড়কগাছ। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। নার্সিং ইনস্টিটিউটের সব আর্থিক লেনদেন হওয়ার কথা সরকারি কোনো ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা চলতি হিসাবে। অথচ সব লেনদেন হয় ইন্সট্রাক্টরের ব্যক্তিগত সঞ্চয়ী ব্যাংক হিসেবে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের টাকাও লেনদেন হয় ওই ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটে গিয়ে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এ সময় সরকারি নিয়ম না মেনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, আর্থিক অনিয়ম, ভুয়া বিল-ভাউচার ও ক্রয়-মেরামত ব্যয় বাবদ ভুতুড়ে বিল উত্তোলনের অনিয়ম খুঁজে বের করেন তারা। পরে সেখানে হাজির হন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: বিদ্যুত কুমার রায়।
জানা গেছে, ২০২৩-২৪ সেশনে ভর্তি হওয়া ৭৫ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে জনপ্রতি অতিরিক্ত দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা বেশি আদায় করে নার্সিং ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া গত দুই বছর ধরে কোনো কমিটির একটি সভারও রেজুলেশন হয়নি। নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর ইনচার্জ ফরিদা ইয়াছমিনের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম এবং সরকারি নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করার অভিযোগ বেশ পুরোনো। এসব নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশিক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আওলিয়ার রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। গত ১৩ জানুয়ারি ওই কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। যদিও সেই প্রতিবেদনে আর্থিক অনিয়মের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে একপ্রকার দায়সারা ও অস্পষ্ট।
এ অবস্থায় সরকারি প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম দুর্নীতি প্রতিরোধে চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটে যান জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এতে নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সাফফাতুল ইসলাম। আরো অংশ নেন মুখ্য সংগঠক সজিবুল ইসলাম, যুগ্ম সদস্যসচিব রেজাউল বাসার প্লাবন, ফাহিম উদ্দিন মভিনসহ অন্যরা। এ সময় চাঞ্চল্যকর আরো অনিয়মের তথ্য খুঁজে পান তারা।

জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সদস্যসচিব সাফফাতুল ইসলাম বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের সব আর্থিক লেনদেনেই অসঙ্গতি রয়েছে। অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ব্যাংকিং লেনদেনে অস্বচ্ছতা, ক্রয় ও মেরামতে অস্বাভাবিক ব্যয় থেকে বোঝা যায় এখানে নজিরবিহীন দুর্নীতি চলছে। মূলত এখানকার নার্সিং ইন্সট্রাক্টর তিনি নিজ ক্ষমতাবলেই এমন অনিয়মনের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন। তিনি আরো বলেন, কিছু অনিয়ম অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তাও স্পষ্ট নয়। নতুন করে বিভাগীয় তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে প্রকৃত দুর্নীতির চালচিত্র।
এসব অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর ফরিদা ইয়াছমিন। মেরামত ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মেরামত খরচ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের জন্য কয়েকটি নতুন চেয়ার কেনা হয়েছে। একইসাথে আসবাবপত্র ক্রয় করে মেরামত হিসেবে খরচ দেখানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: বিদ্যুত কুমার রায় বলেন, এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অডিট হতে পারে। আমরাও পরামর্শ দিব, অডিটের মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছতা যাচাই করার। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।

 


আরো সংবাদ



premium cement