২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ মাঘ ১৪৩১, ২২ রজব ১৪৪৬
`

নারায়ণগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত পাসপোর্ট অফিস ৬ মাসেও চালু হয়নি

আবেদন করতে হচ্ছে নরসিংদী মুন্সীগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ অফিসে গিয়ে
জুলাই আন্দোলন চলাকালে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস : নয়া দিগন্ত -


ছয় মাসেও চালু হয়নি নারায়ণগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম ছয় মাসেও চালু হয়নি। গত ১৯ জুলাইয়ের গণ-আন্দোলন চলাকালে আগুনে পাসপোর্ট অফিস ভবন, আসবাসপত্রসহ গ্রাহকদের বিতরণের জন্য প্রস্তুত রাখা আট হাজার পাসপোর্ট পুড়ে যায়। দীর্ঘ ছয় মাস পার হলেও পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম চালু না হওয়ায় এখন ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। পাসপোর্ট অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী সেবা পেতে এ এলাকার মানুষদের পার্শ্ববর্তী ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী এই তিন জেলায় যেতে হচ্ছে। এতে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে তাদের।

নারায়ণগঞ্জ জেলা গণপূর্ত বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে পাসপোর্ট অফিসের মেরামত কাজ শুরু হয়। ভবনের স্ট্রাকচার ঠিক আছে, তবে ভবনের পলেস্তারা, টাইলস, গ্রিল, দরজাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র পুড়ে ও ভেঙে গেছে। এসব সংস্কারের কাজ চলছে। কাজ শেষ করতে আরো প্রায় দুই মাস সময় লাগবে বলে ঠিকাদার জানিয়েছেন। আশা করছি, খুব দ্রুত কাজ শেষ করে কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড সংলগ্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে অফিস ভবন, আসবাসপত্রসহ গ্রাহকদের বিতরণের জন্য প্রস্তুত রাখা আট হাজার পাসপোর্ট পুড়ে যায়। এতে তিন কোটি ২৭ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে অফিস কর্মকর্তারা জানান।

এদিকে পাসপোর্ট তৈরি, নবায়ন ও অন্য সেবা নিতে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার মানুষ সেবা নিতে আসতেন এই কার্যালয়ে। ভবন পুড়ে যাওয়ায় এখানে সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে সেবা অব্যাহত রাখতে নারায়ণগঞ্জকে তিন জোনে ভাগ করে পার্শ্ববর্তী তিন জেলার আঞ্চলিক অফিস থেকে সেবা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। নারায়ণগঞ্জ সদর ও ফতুল্লার বাসিন্দারা কেরানীগঞ্জে, সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারের বাসিন্দারা নরসিংদীতে এবং বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জের বাসিন্দাদের মুন্সীগঞ্জ জেলার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে সেবা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, অন্য জেলায় গিয়ে সেবা গ্রহণে নানা রকম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সেবা প্রত্যাশীদের। তাদেরকে পড়তে হচ্ছে দালাল চক্রের হাতে। ফলে অনেকেই নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় চালুর অপেক্ষায় রয়েছেন। প্রায়ই দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে খোঁজ নিচ্ছেন কবে নাগাদ চালু হবে এই পাসপোর্ট অফিস।

অন্য জেলায় পাসপোর্ট করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকার মাসুম নামে এক যুবক। তিনি বলেন, পাসপোর্ট অফিসের পাশের এলাকায় তাদের বাড়ি। অফিসটি পুড়ে যাওয়ায় তার বড় ভাইকে মুন্সীগঞ্জ জেলায় গিয়ে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কাজ সারতে পারিনি। শেষে টাকা দিয়ে কাজ করাতে হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম চালু হলে এই ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার দেওভোগ এলাকা থেকে নরসিংদী জেলায় গিয়ে পাসপোর্ট করাতে নানা ভোগান্তিতে পড়েছেন রফিকুল ইসলাম নামের আরেক যুবক। তিনি বলেন, যানজট ঠেলে সেই নরংসিংদী গিয়ে পাসপোর্টের কাগজপত্র জমা দিয়েছি। সেখানে দালালকে টাকা না দিলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। ফলে টাকা দিয়ে কাজ করাতে হয়েছে। এখনো পুরো কাজ শেষ হয়নি। নারায়ণগঞ্জে পাসপোর্ট অফিস থাকলে এতো ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।

নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সংস্কার কাজের তদারকি করছেন শ্রমিক থান্ডু হাওলাদার। তিনি বলেন, ভবনের দেওয়ালের আস্তরণ ও টাইলস নষ্ট হয়ে গেছে। সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। গ্রিল ও দরজা অপসারণের কাজ চলছে। সংস্কারকাজ শেষ করতে আরো প্রায় দুই-তিন মাস সময় লাগতে পারে।
পাসপোর্ট হারিয়ে নিজের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন ফতুল্লার রঘুনাথপুর এলাকার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, আমার এলাকার পাসপোর্ট করতে যেতে হচ্ছে কেরানীগঞ্জে। সেখানে গিয়ে কাজ শেষে এখন পাসপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।
আমিনুল নামে আরেকজন বলেন, আমার পাসপোর্ট নবায়ন করতে হবে। ডিসি অফিসে গিয়ে জানতে পারি এলাকা অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের পাসপোর্ট সংক্রান্ত সেবা দেয়া হচ্ছে কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদীতে। সেখানে গিয়েও নানা ভোগান্তির শিকার হয়েছি। ছবি তুলতে ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার জন্য দু’দিন পর্যন্ত দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে এসেছি। আমরা এই ভোগান্তি আর চাই না। আমরা চাই দ্রুত আমাদের পাসপোর্ট অফিসটি চালু করা হোক।

 


আরো সংবাদ



premium cement