২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ মাঘ ১৪৩১, ২২ রজব ১৪৪৬
`

লোহার টুকরায় জীবিকা চলে শেফালীর

চাটমোহরে অসহায় বৃদ্ধ শেফালী : নয়া দিগন্ত -


মাঝারি আকৃতির একটা চুম্বকের সাথে রশি বাঁধা। চুম্বকটি পথে ফেলে রশির অপর প্রান্ত ধরে চুম্বকটিকে পথে পথে টেনে হেঁটে চলেন শেফালী (৭০)। শ্যাম বর্ণের এ মানুষটিকে দেখে অপরিচিতরা হয়তো তাকে পাগল ভাবেন। চুম্বকের আকর্ষণে চুম্বকের সাথে আটকে আসে লোহার টুকরা, পুরনো ব্লেড ও অন্যান্য লৌহজাত দ্রব্য। লোহার টুকরাগুলো সংগ্রহ করে বিক্রি করে যে টাকা পান তাতেই চলে শেফালীর জীবন-জীবিকা, প্রাণের স্পন্দন। বেঁচে থাকার জন্য এ কাজটাকেই তিনি বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে।
শেফালী জানান, তার পৈতৃক নিবাস পাবনার চাটমোহরের হরিপুর ইউনিয়নের লাউতিয়া গ্রামে। শেফালীরা ছিলেন চার ভাই দুই বোন। শেফালী যখন ছোট তখন তার বাবা মৎসজীবী বাবা আব্দুর রহমান মারা যায়।

যৌবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন পাবনার ঈশ্বরদীতে। তাও প্রায় ৪৫ বছর আগের কথা। তখন ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনের পাশে থাকাবস্থায় জিআরপি থানার তৎকালীন কিছু পুলিশ আলম নামক রংপুরের এক যুবকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন শেফালীকে।
ঈশ্বরদীতে স্বামীর সাথে ভাড়াবাড়িতে সুখে-দুঃখে ভালোই দিন কাটছিল তার। প্রায় ১৫ বছর পর একদিন শেফালীকে ছেড়ে পালিয়ে যায় আলম। পরে শুনেছেন অন্য কাউকে বিয়ে করে তার সাথে সংসার করছে আলম। কী আর করা, ঈশ্বরদীর মায়া ত্যাগ করে ফিরে আসেন জন্মভূমি চাটমোহরে।
সুলতান হোসেন নামে এক ব্যক্তির সহানুভূতিতে তার জায়গায় একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করতে থাকেন পৌর সদরে। এর নিমতলার বড়াল নদীর পাড়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স-সংলগ্ন সরকারি জায়গায় ঠাঁই হয় শেফালীর। সর্বশেষ গত ১০ বছর ধরে বসবাস করছেন পরিত্যক্ত চাটমোহর নতুন বাজার দাতব্য চিকিৎসালয়ের পাশে বড়াল নদীপাড়ের এক শূকরের ঘরের পাশে ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে।

চেয়েচিন্তে পেট না চলায় পেশা হিসেবে বেছে নেন চুম্বকের সাহায্যে লোহা সংগ্রহের কাজ। ভোর থেকে প্রায় সারা দিন চলে লোহা ও প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহের কাজ। সংগৃহীত লোহা, প্লাস্টিকের বোতল কিছুদিন পর পর বিক্রি করে যে টাকা পান তাতেই চালাতে হয় সংসার।
শেফালী আরো জানান, বাড়িঘর, ছেলেমেয়ে কেউ নেই তার। অসুখবিসুখ হয়, লাগে ওষুধপত্রও। ভাঙা ঘরে শেয়াল-কুকুর ঢুকে ভাত খেয়ে যায়। তাই সরকারিভাবে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে চাটমোহর সমাজ সেবা কর্মকর্তা সোহেল রানা জানান, শেফালীর ব্যাপারটি আমি জানলাম। সে যদি চাটমোহরের নাগরিক হয়ে থাকে সমাজ সেবা অফিস থেকে বয়স্কভাতার ব্যবস্থা করে দেবো। অসুস্থ হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement