রৌমারীতে ব্রহ্মপুত্র ও তিতাসে গোমতীর তীব্র ভাঙন
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। অপর দিকে কুমিল্লার তিতাস ও দাউদকান্দিতে গোমতী নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। অসময়ে ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এসব নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, রৌমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভাঙনকবলিত এলাকার হাজার হাজার মানুষ। অসময়ে নদীভাঙনের ফলে নদীকূলীয় মানুষজন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। রৌমারী উপজেলাধীন চর-শৌলমারী ইউনিয়নের সুখের বাতি ও ঘুঘুমারী গ্রাম ব্রহ্মপুত্র নদের কড়াল গ্রাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে ব্রহ্মপুত্র নদে ড্রেজিং না করায় নদে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছ। যার ফলে উজান থেকে নেমে আসা পানির স্রোত তীব্র আকার ধারণ করে। পানির প্রচণ্ড চাপে ঘুঘুমারী ও সুখের বাতি গ্রামের মধ্য দিয়ে নদীটি প্রবল বেগে আঘাত হানে। যার ফলে শুরু হয় প্রচণ্ড নদীভাঙন। এমন ভাঙনে ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার বসতবাড়িসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নদীভাঙনের শিকার হয়ে ঘরবাড়ি হারানো শতাধিক পরিবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
বর্ষা মৌসুম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে রৌমারী উপজেলার ঘুঘুমারী, সুখের বাতি, ইটালুকান্দা, সাহেবের আলগা, চর গেন্দার আলগা, খেওয়ারচর, খেদাইমারী, পশ্চিম বাগুয়ারচর, বাইস পাড়া, বলদমারা, পশ্চিম পাখিউড়া, ফলুয়ার চর, পালেরচর, ধনারচর, দিগলাপাড়া, তিনতলী , বাগুয়ারচর, বাইটকামারী, উত্তর খেদাইমারী, দক্ষিণ খেদাইমারী, উত্তর পাখিউড়া, পশ্চিম খনজনমারাসহ ২৫টি গ্রাম ভাঙনের মুখে পড়েছে।
ভাঙনকবলিত এলাকায় গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত পরিবারগুলোর আহাজারি। অসময়ের ভাঙনে সুখের বাতি আদর্শ গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীভাঙনের কবলে পরায় তড়িঘড়ি করে ভবনটি নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। নদীর তীর ঘেঁষা অসহায় মানুষগুলো ভিটামাটি হারিয়ে সড়কের এক কোণে অন্যের বাঁশঝাড়ে ছাপড়াঘর নির্মাণ করে, আবার কেউ কেউ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, এই মুহূর্তে কোনো প্রকার বরাদ্দ নেই। তিনি আরও বলেন, আমরা এসব এলাকার তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি, বরাদ্দ এলেই নদীভাঙন রোধে কাজ করা হবে।
নদীভাঙনের বিষয় চর শৌলমারী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান এস এম সাইদুর রহমান বলেন, চর শৌলমারী ইউনিয়নটি মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে কিন্তু দেখার কেউ নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ডিও বলেন, আমি ভাঙনকবলিত এলাকায় গিয়েছিলাম, দেখে আসছি তাদের বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হচ্ছে। এ বিষয় আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।
তিতাস (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, গোমতী নদীর অব্যাহত ভাঙনে তিতাস ও দাউদকান্দি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের খোশকান্দি গ্রাম পুরোপুরি নদীতে বিলীন হয়ে যাবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদীভাঙন রোধকল্পে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করা হলেও অদ্যাবধি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এ দিকে নদীভাঙন রোধের আবেদনটি ফাইল চালাচালির মধ্যেই আটকে পড়ে আছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
কুমিল্লা থেকে প্রবাহিত খরস্রোতা পাহাড়ি নদী গোমতী। এটি তিতাস ও দাউদকান্দি উপজেলার সীমান্ত দিয়ে মেঘনা নদীতে গিয়ে মিশেছে। গত ১০-১২ বছর ধরে গোমতী নদীর অব্যাহত ভাঙনে তিতাস উপজেলার লালপুর, নারান্দিয়া এবং দাউদকান্দি উপজেলার খোশকান্দি, লক্ষ্মীপুর ও চান্দের চর গ্রামের অংশে বহু কাঁচা-পাকা ঘর-বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত বছরের প্রলয়ঙ্করী বন্যাকালে নদীভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খোশকান্দি, নারান্দিয়া ও লক্ষ্মীপুর এলাকা। গোমতী নদীর করাল গ্রাসে ইতোমধ্যে শুধুমাত্র খোশকান্দি গ্রামের কমপক্ষে ৫০টি বাড়ি ও ৯০ বিঘা চাষের জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে শতাধিক পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে।
পাউবোর কুমিল্লা নির্বাহী প্রকৌশলী খান ওয়ালিউজ্জামান বলেন, নদীভাঙন রোধকল্পে ব্যয়ের প্রাক্কলন করে ঢাকায় ডিজি অফিসে পাঠিয়েছি। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় কাজ করা যাচ্ছে না। ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, গোমতী নদীভাঙনে শতাধিক পরিবার গৃহহারা হয়েছে। ৮০-৯০ বিঘা চাষের জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা