শোধনাগার ৭ বছর আগে হলেও বের হয়নি এক ফোঁটা পানি
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা- হুসাইন মালিক চুয়াডাঙ্গা
- ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ভূ-গর্ভস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণকাজ সাত বছর আগে সম্পন্ন হলেও এক ফোঁটা পানিও সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ দিন ধরে এটি বন্ধ থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে শোধনাগারের মূল্যবান যন্ত্রপাতি। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শোধনাগারটি এখন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এতে করে পৌর এলাকার নাগরিকরা বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ভূ-গর্ভস্থ থেকে পানি উত্তোলনের পর কয়েকটি স্তরে ফিল্টার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পানি সরবরাহ করার অত্যাধুনিক ব্যবস্থ্যাসংবলিত শোধনাগারটি নির্মিত হলেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ওভারহেড ট্যাংক ও শোধনাগারটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। জানা গেছে, ভূ-গর্ভস্থ পানি শোধনাগার ও ওভারহেড পানির ট্যাংক নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা। যা থেকে পৌর এলাকার দুই লাখ মানুষ পানির সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে লোকবল সঙ্কট ও বিদ্যুৎ বিল খরচ বেশি হওয়ায় শোধনাগারটি চালু রাখা সম্ভব নয়।
২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ভূ-গর্ভস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ৩৭ জেলা শহর পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ছাগল-ফার্ম পাড়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানি শোধনাগারটির নির্মাণকাজ ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয়। শেষ হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে।
শোধনাগারের পানি সংরক্ষণ করার জন্য ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন সে সময়ের পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু। ৬৮০ ঘনমিটার ধারণ ক্ষমাতা সম্পর্ণ ওভারহেড পানির ট্যাংক নির্মাণ করা হয়। কিন্তু শোধনাগারটি চালু না থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ট্যাংকের সুইচ ভাল্ব, মোটর, ফিল্টার, পাইপ, রিজার্ভ ট্যাংক, পাম্প গ্যালারি, পানির ট্যাংক, জেনারেটর ও ইলেকট্রিক ট্রান্সফরমারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। স্টাফ কোয়ার্টার ও শোধনাগারের ভবনও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার ঘনমিটার পানি উৎপাদন হলে চাহিদার অর্ধেক পূরণ হবে। পৌর এলাকার ৬৬৬৬ জন গ্রাহকের জন্য প্রতিদিন পানির চাহিদা রয়েছে ৭৬৯৪ ঘনমিটার। বর্তমানে ১৪টি পানির পাম্প হাউজ থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্রাহকদের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনটি পাম্প হাউজ বন্ধ রয়েছে বর্তমানে। এ পর্যন্ত ১১৫১ জন গ্রাহক পানির লাইনের সংযোগ কর্তন করেছেন। পৌর এলাকায় ১১৩ কিলোমিটার পাইপ লাইন রয়েছে পানি সরবরাহের জন্য। পাইপের মাপের উপর ভিত্তি করে পৌর কর্তৃপক্ষ বিল আদায় করেন গ্রাহকদের কাছ থেকে। ২০০-৫৫০ টাকা পর্যন্ত বিল আদায় করা হয়। শোধনাগার থেকে প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার ঘনমিটার সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে।
ভূ-গর্ভস্থ পানি শোধনাগারটি সাড়ে আট কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার মিরপুর এলাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীর আলম কনস্ট্রাকসন্স নির্মাণকাজ শেষ করে। ৬৮০ ঘনমিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ওভারহেড ট্যাংকটি ইউজিআইআইপি-৩ প্রকল্পের আওতায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমটি অ্যান্ড এস এম কনসোর্টিয়াম নির্মাণকাজ করে। মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেনি। সে সময়ের ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মূল ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজ নিয়ে নিজেদের মতো করে কাজ করেন।
পৌর এলাকার কয়েকজন জানান, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে পানি শোধনাগার নির্মাণ করা হলেও কোনো কাজে আসছে না। তালাবদ্ধ অবস্থায় বছরের পর বছর পড়ে রয়েছে শোধনাগারটি। নষ্ট হচ্ছে জিনিসপত্র। ভবনগুলোর অবস্থা জরাজীর্ণ। এটি আর চালু করা সম্ভব হবে না। জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। সাপ আর পোকামাকড়ের বসবাস গড়ে উঠেছে। এত টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হলো, অথচ জনগণের কোনো কাজে আসছে না। টাকা লুট করার জন্যই প্রকৃতপক্ষে এসব প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারের কিছু লোক। আমাদের দাবি শোধনাগারটি চালু করা হোক অতি দ্রুত। সেই সাথে যারা এই প্রকল্পের সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।
চুয়াডাঙ্গা পৌর সভার নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রেজাউল করিম জানান, পানি শোধনাগারটি বন্ধ রয়েছে। এটি চালু রাখা ব্যয়বহুল। বিদ্যুৎ বিল আসবে প্রতি মাসে আট-দশ লাখ টাকার মতো। যা পৌরসভার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। আর লোকবল সঙ্কট রয়েছেই। কোনো প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পেলে চালু করা সম্ভব। বিষয়টি নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা