১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪ মাঘ ১৪৩১, ১৭ রজব ১৪৪৬
`

রংপুরে বেহাল সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা নিচ্ছে বেসরকারি খাত

-

- বদলি নীতিমালা দুর্বল হওয়ায় সরকারি সব চিকিৎসক শহরমুখী
- বাড়ছে ভোগান্তি, মিলছে না কাক্সিক্ষত সেবা
- পকেট কাটা যাচ্ছে সাধারণের, তৈরি হচ্ছে বিদেশ নির্ভরতা

রংপুর বিভাগজুড়ে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী সঙ্কটে এক নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অনুমোদিত পদের অর্ধেকও নেই চিকিৎসক কিংবা স্বাস্থ্যকর্মী। যারা আছেন, তারাও বদলি নীতিমালার দুর্বলতার সুযোগে শহরমুখী হন। এই সঙ্কট উত্তরণে কোনো পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে না। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে মিলছে না সরকারি চিকিৎসা সেবা। যার সুযোগ নিচ্ছে বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো। পকেট কাটছে সাধরাণ মানুষের। এ দিকে মানসম্মত চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই বিদেশমুখীও হচ্ছেন।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্য মতে বিভাগের আট জেলার ৫৮টি উপজেলায় সরকারি পর্যায়ে তিনটি মেডিক্যাল কলেজ, দুইটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, ছয়টি ২৫০ শয্যার হাসপাতাল, দুইটি ১০০ শয্যার হাসপাতাল, ৪৭টি ৫০ শয্যার হাসপাতাল, তিনটি ৩১ শয্যার হাসপাতাল , তিনটি ২০ শয্যার হাসপাতাল, দুইটি ১০ শয্যার হাসপাতাল, ১৯৮টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৩৩০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, পাঁচটি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক এবং তিনটি স্কুল হেলথ ক্লিনিক দিয়ে চলছে পুরো সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে চিকিৎসা কার্যক্রম। চিকিৎসকদের অনুমোদিত ২ হাজার ২৩০টি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ১ হাজার ৭৩ জন, যা অর্ধেকেরও কম।

ফলে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। তাদেরকে দৌড়াতে হচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিকে। সেখানে গিয়ে হয়রানি, আর্থিক অপচয় এবং মানসম্মত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্য মতে বেসরকারি চিকিৎসা কার্যক্রমের চিত্রেও সেটি ফুটে উঠেছে। এরই মধ্যে এই বিভাগে বেসরকারি পর্যায়ে ৪টি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে (সেনাবাহিনী পরিচালিত ১টি), ১টি ডেন্টাল কলেজ, ৪৩৩টি বেসরকারি ক্লিনিক, ৯০৯টি ডায়াগোনস্টিক সেন্টার, ১০টি ব্লাড ব্যাংক, ৮টি ডায়াবেটিক হাসপাতালের তথ্য আছে। এর বাইরেও হাজার হাজার ক্লিনিক, ডায়াগোনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে সিটি, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়েও। সেখানে নেই কোনো চিকিৎসক, নেই কোনো অবকাঠামো ও সরঞ্জামাদিও।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের রংপুর মহানগর সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, কাগজে-কলমে গড়ে উঠা এবং চাকচিক্যময় প্রচারণায় সাধারণ মানুষ সেসব হাসপাতালে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। বাড়তি খরচ করছেন। ভুল চিকিৎসার শিকারও হচ্ছেন কেউ কেউ। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ বেসরকারি পর্যায়ের চিকিৎসালয়ে কোনো চিকিৎসাই হয় না। মানসম্মত হওয়া তো দূরের কথা।

ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম এনডিএফের রংপুর বিভাগীয় সভাপতি ডা: মোহাম্মদ হোসেন জানান, নতুন কর্মস্থলে যোগ দেয়া চিকিৎসকদের দুই বছর পরই বদলি হতে পারবেন এমন নীতিমালা বাতিল করে কমপক্ষে তিন বছর করতে হবে। যারা উচ্চতর কোর্স করবেন, তারাই শুধু দুই বছর পরে বদলি নিতে পারবেন। নিয়োগের পরই সমন্বয় করে নিজ জেলা ও উপজেলায় পদায়ন করতে হবে। চক্রাকারে চিকিৎসকদের নিজ জেলায় থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
ডক্টরস এসোসিয়েশন অব ড্যাবস-এর রংপুর জেলা সভাপতি ড. নিখিলেন্দু গ্রহ রায় বলেন, রংপুর বিভাগের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্কট চরমে। এই খাতে বাজেট অন্তত তিন গুণ বাড়াতে হবে। যেসব দেশে পকেট থেকে টাকা খরচ করে স্বাস্থ্যসেবা সরাসরি কেনা হয়, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা সমন্বিত, সুসংগঠিত এবং সরকারিভাবে সর্বজনীন হতে হবে। তিনি আরো বলেন, বেসরকারি চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমকে শক্ত মনিটরিংয়ের আওতায় না আনলে জনগণ প্রতারিত হতেই থাকবেন। যার খারাপ প্রভাব ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী সঙ্কটের বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় পরিচালক পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা: হারুন অর রশীদ জানান, রংপুর বিভাগে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র অর্ধেক। সে কারণে আমরা কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারছি না। আশা করছি এই সঙ্কট কাটাতে সরকার খুব দ্রুতই একটা ভালো পদক্ষেপ নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement