ভেজাল বীজে স্বপ্নভঙ্গ মানিকছড়ির আলুচাষিদের
বীজে মিশ্রণ বা গুদামজাতে ত্রুটির আশঙ্কা- আবদুল মান্নান মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি)
- ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
দীর্ঘ সময় ধরে দেশে আলুর ঊর্ধ্বমুখী বাজারে ভোক্তাদের যখন নাভিশ^াস, তখন খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির কৃষকরা বড় আশায় বুক বেঁধে এবার আলু চাষ করেছিলেন। উপজেলার প্রায় অর্ধশত কৃষক তাদের ৩৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করেন। তবে বাজারের ভেজাল ও নি¤œমানের বীজ বপনের কারণে তাদের কপাল পুড়েছে। চুরমার হয়ে গেছে আবদুস সোবহান, সুমন, আলী আহমেদ, আবদুর রশিদসহ অন্তত ২০জন প্রান্তিক কৃষকের স্বপ্ন!
ভেজাল বীজে কৃষকদের প্রতারণা ও ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ তদন্তে এবার মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছে কৃষি বিভাগ। গত বুধবার চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন এবং ড. মো: শাহাদাত হোসেন কৃষকদের আলুক্ষেত সরেজমিনে পরিদর্শনে আসেন। তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে মনে করছেন ‘বীজে মিশ্রণ বা গুদামজাতের ত্রুটিতেই’ এমনটি হয়েছে!
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা স্থানীয় বাজারের ‘প্রকাশ বীজ ভাণ্ডার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এসিআই কোম্পানির আলুবীজ উচ্চ দরে (প্রতি কেজি ৯০ টাকা) সংগ্রহ করেন! এর মধ্যে কৃষকের জমিতে ৩০-৩৫% আলুবীজ গজায়নি! আবদুল সোবহান নামে এক আলুচাষি তার প্রত্যাশিত ফলন না পাওয়ার আশঙ্কায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে স্থানীয় প্রশাসনের (ইউএনও) কাছে আবেদন করেন। যা পরে তদন্তের জন্য কৃষি অফিসে পাঠানো হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আবদুস সোবহান বলেন, আমি সাড়ে চার কানি (১৮০ শতক) জমির জন্য ‘প্রকাশ বীজ ভাণ্ডার’ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে ৬০০ কেজি আলু বীজ কিনে নিঃস্ব হয়েছি! ৩০-৩৫% আলু বীজই গজায়নি! এতে আমার কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
একই দোকান থেকে বীজ নেয়া এয়াতলংপাড়ার আলী আহমেদ জানান, আমি ‘প্রকাশ বীজ ভাণ্ডার’ থেকে এসিআই কোম্পানির ৮০ কেজি বীজ কিনে রোপণ করলেও চারা গজিয়েছে মাত্র ১৫-২০%। পরে কুমিল্লা থেকে আবার আলুবীজ এনে লাগিয়েছি। সেগুলোতে ৮০-৮৫% চারা গজিয়েছে। যদি এসিআই কোম্পানির বীজে ভেজাল না হতো তাহলে আমার মতো অন্তত আরো ২০জন কৃষকের একই দশা হতো না। চেঙ্গুছড়ার সুমন, এয়াতলংপাড়ার আবদুর রশিদও এসিআই কোম্পানির বীজ কিনে প্রতারিত হন বলে অভিযোগ করছেন।
তবে প্রকাশ বীজ ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী দুলাল চন্দ্র মজুমদার বীজ বিক্রির সত্যতা স্বীকার করলেও বীজে ত্রুটি বা ভেজাল থাকার বিষয়টি একেবারেই অস্বীকার করে বলেন, কৃষকের অদক্ষতার কারণে হয়তো বীজ নষ্ট হয়ে থাকতে পারে!
এদিকে উপজেলা কৃষি বিভাগ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক দলের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠনের আবেদন করলে কৃষি বিভাগ তাতে সাড়া দেয়। ফলে গত ১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকেলে হাটহাজারীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন ও ড. মো: শাহাদাত হোসেন এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জহির রায়হান সরজমিন পরিদর্শনে আসেন।
তারা জমিতে সৃজিত বীজ, মাটিপরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাথে কথা বলেন। পরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জহির রায়হান। তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব (অফিসিয়াল) তদন্ত চলমান রয়েছে। এরপরও বিষয়টির প্রকৃত কারণ উদঘাটনে দুজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এসেছেন। তারা প্রয়োজনীয় তথ্য, উপাত্ত ও নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এগুলো পরীক্ষার মাধ্যমে খুব শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে। তবে আমাদের কাছে মনে হয়েছে ‘বীজে মিশ্রণ বা গুদামজাতের ত্রুটি’র কারণে এমনটি হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা