ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনে ব্যস্ত প্রশাসন, ক্যাম্পাসে ক্ষোভ
- পবিপ্রবি প্রতিনিধি
- ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৪
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম সঙ্কটে ছাত্রছাত্রীদের পোহাতে হয় সীমাহীন ভোগান্তি, আবাসন ব্যবস্থার অচলাবস্থা, হলের ক্যান্টিন ও টিএসসি নিয়ে নেই অভিযোগের অন্ত। বছরের পর বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক সংস্কারের দাবি থাকলেও তা নিয়ে নেই কোনো কার্যকরী উদ্যোগ। বিগত সরকারের আমলে ভেঙে ফেলা বিশ্ববিদ্যালয় স্কয়ার পুনঃস্থাপনের দাবি বার বার উঠলেও যৌক্তিক এসব সংস্কার বাদ দিয়ে যেন বিগত আওয়ামী প্রশাসনের পুনর্বাসনেই ব্যস্ত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) নব্য প্রশাসন। যা নিয়ে ইতোমধ্যে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম, প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. এস এম হেমায়েত জাহান, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক এবং আইন ও ভূমি প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো: জামাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ প্রশাসন বিতর্কিত কর্মকর্তা শামসুল হক রাসেলকে চাকরিতে পুনর্বাসন করে এ বিতর্ককে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ‘জুলাই বিপ্লব’ নিয়ে এসব শিক্ষক শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের সামনে তারা বিভিন্ন প্রেরণামূলক বক্তব্য দিলেও বর্তমানে তাদের এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি করেছে।
এর আগে আওয়ামী আমলে বহিষ্কার হওয়া ল্যাংগুয়েজ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সাবেক নেতা অধ্যাপক মেহেদী হাসানকে পুনর্বাসিত করে এ প্রশাসন। পরে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক জামাল হোসেনের একক সুপারিশে অধ্যাপক মেহেদী হাসানের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা, নিয়োগে অনিয়ম, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী বিধিমালা ভঙ্গসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে অধ্যাপক মেহেদীর বিরুদ্ধে। স্নাতকে ২.৯৫ সিজিপিএ পাওয়া এ শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা পূরণ না করেও দলীয় প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে নিয়োগ পান এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পদোন্নতির শর্ত পূরণ না করেই নিয়েছেন একের পর এক প্রমোশন। তার বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের জুন মাসে আনিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগগুলোর তদন্তে সত্যতা পায় দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কমিটি যা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিকে নিশ্চিত করা হয়। এতো কিছুর পরেও বিপ্লব পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা শিক্ষক অধ্যাপক জামাল হোসেনের একনিষ্ঠ ব্যক্তি হওয়ায় অধ্যাপক মেহেদীর সাময়িক বহিষ্কারাদেশ বাতিল করা হয়।
অধ্যাপক মেহেদী হাসানের পুনর্বহালের বিষয়ে অধ্যাপক জামাল হোসেনকে মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও যথাযথ কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন।
শুধু আওয়ামী পুনর্বাসনই নয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সরাসরি বাধাদানকারী এবং বিতর্কিত শিক্ষক ড. সন্তোষ কুমার বসুর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাকে ছুটি দিয়ে তার দায় থেকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করে দেন ভিসি রফিকুল ইসলামের প্রশাসন। জুলাই বিপ্লবের সময়কালে ‘পাঁচ হাজার মানুষ মারতে হলেও সরকার চিন্তা করবে না’ এমন মন্তব্য করে শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেন তৎকালীন এ রেজিস্ট্রার। তখনকার সময়ে একটি জাতীয় দৈনিকে তার এ বিষয়টি উঠে এলে তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিতর্কিত এ শিক্ষককে ছুটি দিয়ে দায়মুক্তি দেয়ার বিষয়টি নিয়ে গত নভেম্বর মাসে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে শিক্ষকদের ব্যাপক আপত্তির মুখে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে প্রশাসন।
সব কিছু ছাপিয়ে গত ডিসেম্বরে ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনে সবচেয়ে বড় চমক সৃষ্টি করেছে পবিপ্রবি প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত কর্মকর্তা পিও-টু প্রো-ভিসি শামসুল হক রাসেলের সাময়িক বহিষ্কারাদেশ তুলে দেয় প্রশাসন। যার বিরুদ্ধে আওয়ামী প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষককে হেনস্থা, হত্যার হুমকি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগার থেকে অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলনসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে এক শিক্ষককে হেনস্থা করার ঘটনায় তদন্তে সত্যতা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তদন্ত কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ও প্রো-ভিসি অধ্যাপক এস এম হেমায়েত জাহান তার এ বহিষ্কারাদেশ তুলে দিতে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন।
প্রো-ভিসি অধ্যাপক হেমায়েত জাহান জানান, এ বিষয়ে আগের প্রশাসন রিজেন্ট বোর্ডেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে কারণে তাকে বাধা দেয়ার অধিকার আমাদের নেই। তবে তার অতীত অপরাধের বিষয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান। অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনবে প্রশাসন।
ভিসি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের আমলে অনেকে প্রশাসনের রোষানলে পড়ে চাকরি হারিয়েছেন। কিন্তু বিতর্কিতদের বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে কিভাবে চাকুরিতে পুনর্বহাল করা হলো সেটা আমারও প্রশ্ন এবং আমিও এগুলো নিয়ে প্রো-ভিসিকে জিজ্ঞেস করেছি। আমি যেহেতু জুলাই বিপ্লবের দুই মাস পরে এসেছি, তারাই সেগুলো ভালো বলতে পারবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা