১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`

কৃষকের গলার কাঁটা ফুলকপি মিলছে না ন্যায্যমূল্য

ভ্যানে করে প্রতিটি ফুলকপি ২-৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে : নয়া দিগন্ত -

# প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ২-৫ টাকায়
# অনেকে ক্ষেত থেকে তুলছেন না

এবার ফুলকপি চাষ করে কৃষকরা বড় বিপদে পড়েছেন। তারা ফুলকপি বিক্রি করতে পারছেন না। ক্ষেতের কপি ক্ষেতেই পড়ে রয়েছে। কেউ কেউ সেগুলো কেটে নিজেদের গবাদিপশুকে খাওয়াচ্ছেন। অনেকে বলছেন, ফুলকপি এখন কৃষকদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, ক্ষেতের কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি পিস কপি দুই টাকায় কিনে ভ্যানে করে পাড়া মহল্লায় চার টাকায় ফেরি করে বিক্রি করছেন সবজি ব্যবসায়ীরা। নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, শুরুতে প্রতিটি ফুলকপি ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে ফুলকপির বাজারে ধস নেমেছে। প্রতিটি কপি মাত্র দুই-তিন টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় ক্ষেত থেকে কপি তুলে মজুরি ও পরিবহন খরচ না ওঠায় অনেক কৃষক ক্ষেতেই কপি নষ্ট করে ফেলছেন। অনেকে আবার গবাদিপশুকেই খাওয়াচ্ছেন ফুলকপি।
সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ দুবাছড়ি গ্রামের কৃষক সহিদ জানান, ৩০ শতক জমিতে এবার মামুন জাতের ফুলকপি চাষ করেছিলাম। চারা, সেচ ও সার মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। ফলন দেরিতে হওয়ায় আগাম বাজার ধরতে পারিনি। ফলে পাঁচ হাজার টাকার মতো লোকসান গুনতে হয়েছে।
গত শনিবার নীলফামারীর প্রধান সড়কের ডাইলপট্টী এলাকায় ভ্যানে করে ফুলকপি বিক্রি করতে দেখা যায় রাফি নামের এক সবজি ব্যবসায়ীকে। তিনি জানান, অনেকে গরুকে খাওয়ানোর জন্য তার কাছ থেকে একসাথে পাঁচ-সাতটি করে কপি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। শহরের পুরাতন স্টেশন এলাকার কৃষিশ্রমিক বাচ্চু মামুদ বলেন, মৌসুমের শুরুতে বেশি দামের কারণে ফুলকপি কিনতে পারিনি। আজ ২০ টাকায় পাঁচটি কিনলাম। দুইটি নিজেরা রান্না করে খাবো, বাকি তিনটি কেটে গরুকে খাওয়াবো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা: এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, নীলফামারীতে বাম্পার ফলন ও অতিরিক্ত ফুলকপির চাষ হওয়ায় সবজিটির দাম পড়ে গেছে। শুরুতে যারা বাজারজাত করতে পেরেছেন, তারাই লাভবান হয়েছেন।
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে লোকসান গুনতে হয়েছে ফুলকপিচাষিদের। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে কৃষকরা পাইকারিভাবে প্রতিটি ফুলকপি বিক্রি করছেন ১০ টাকায়। বাজারের এই দামে এখন পুঁজি তুলতে পারছেন না তারা।
সরেজমিন গত সোমবার উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের কয়েকটি সবজিক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে, জমি থেকে ফুলকপি তুলছেন কৃষকরা। কেউ কেউ ক্ষেতে হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। মোজাম্মেল নামের এক কৃষক জানান, ৪০ শতক জমিতে ফুলকপির চাষ করেছি। খরচ পড়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করেছি। জমিতে বাকি যে কয়টি ফুলকপি আছে, তাতে পুঁজি উঠবে না।
তবে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকদের থেকে ১০ টাকায় ক্রয় করা ফুলকপি খুচরা বাজারে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা লোকসান দিলেও মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা ঠিকই লাভবান হচ্ছেন। ভোক্তাকে দ্বিগুণ দামেই ফুলকপি কিনতে হচ্ছে।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ফুলকপিতে মৌসুমের শুরুতে আর শেষের দিকেই কৃষকরা বেশি লাভবান হয়। তখনই কেবল পুঁজি উঠে আসে কিংবা লাভবান হওয়া যায়।
সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় এখন প্রতিটি ফুলকপি মাত্র তিন টাকা থেকে পাঁচ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদন খরচ না ওঠায় এখন কৃষকদের মাথায় হাত। সবজিচাষি বশির আহমেদ এবার ১৮ বিঘা জমিতে ফুলকপির চাষ করেছিলেন। বাজার হঠাৎ পড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি।
পাইকাররা বাজারে চাহিদার অতিরিক্ত ফুলকপি কিনছেন না। সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি কপি তারা তিন থেকে পাঁচ টাকায় কিনছেন। অথচ প্রতি পিস ফুলকপির উৎপাদন ও বাজারজাত করতে কৃষকের খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ টাকার মতো। অনেক কৃষক ফুলকপি বিক্রি করতে না পেরে নিজের ক্ষেতেই সেগুলো কেটে ফেলে রাখছেন। অনেকে কেটে গরু-ছাগলকে খাওয়াচ্ছেন।
উপজেলার চামারখাই এলাকার বাবু মাস্টার জানান, এক লাখ ফুলকপির চারা রোপণ করেছিলেন তিনি। ৪০ হাজার পিস বিক্রি করার পর দাম না পাওয়ায় বাকি ফুলকপি তিনি ক্ষেতে ফেলে রেখেছেন।
সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সাটুরিয়ায় এ বছর চাহিদার তুলনায় ফুলকপির উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কমে গেছে। তবে, যারা আগাম চাষ করতে পেরেছিলেন, তাদের ভালো লাভ হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement