চৌগাছা ও দেওয়ানগঞ্জে খাদ্য গুদামে ধান-চাল সংগ্রহে ভাটা
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০৫
সরকারের বেঁধে দেয়া মূল্যের চেয়ে খোলা বাজারে ধান ও চালের দাম বেশি। এ কারণে কৃষকরা ডিলারদের কাছে বিক্রি না করায় সরকারি গুদামগুলোতে ধান-চাল সংগ্রহে ভাটা পড়েছে। এবার আমন মৌসুমে খাদ্য গুদামগুলো ধান-চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
চৌগাছা (যশোর) সংবাদদাতা জানান, চলতি আমন মৌসুমে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান-চাল সংগ্রহে ভাটা পড়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ১৭ নভেম্বর সারা দেশে একযোগে আমন ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন খাদ্য উপদেষ্টা। তবে এ কার্যক্রমে কৃষক ও মিলারদের সাড়া মেলেনি মোটেও। উদ্বোধনের পর গুদামে মিলারদের দেয়া চাল কিছুটা এলেও ধান সংগ্রহ হয়নি এক দানাও। গত দেড় মাসে গুদামে ধান আসেনি। মিলারদের নিকট থেকে মাত্র ২২ টন চাল এসেছে বলে জানান উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান।
উপজেলা খাদ্য গুদামসূত্রে জানা যায়, গত ১৭ নভেম্ববর চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন করা হয়, যা শেষ হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি (২০২৫)। খাদ্যগুদামে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পৌর এলাকার কৃষকের নিকট থেকে সরাসরি প্রতিমণ ধান এক হাজার ৩২০ টাকা দরে ক্রয় করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ২শ’ ৪৩ মেট্রিকটন নির্ধারণ করা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের প্রায় অর্ধেক শেষ হলেও এ পর্যন্ত এক দানা ধানও পড়েনি সরকারি খাদ্য গুদামে। অপরদিকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় শ’ ৮৫ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২২ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫ শতাংশ। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বর্তমানে চিকন ধান এক হাজার পাঁচশ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মোটা জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার চারশ’ থেকে এক হাজার ৪৫০ টাকায়।
উপজেলার সিংহঝুলী ইউনিয়নের গরীবপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, স্থানীয় বাজারে যে দামে ধান বিক্রি হচ্ছে, গুদামে সে দাম দেয়া হচ্ছে না। গুদামের চেয়ে স্থানীয় বাজারে মণপ্রতি ধানের দাম কমপক্ষে দুই-তিন শ’ টাকা বেশি। তা ছাড়া সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। সে কারণে বাইরের ব্যবসায়ীদের নিকট কৃষকরা ধান বিক্রি করতে স্বাচ্ছন্দ্য পাচ্ছেন।
মিল মালিকরা জানান, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে খোলাবাজারে চালের দাম বেশি হওয়ায় খাদ্যগুদামে চাল দিতে মিলারদের তেমন আগ্রহ নেই। কিন্তু মিলের লাইন্সেস বাঁচাতে লোকসান সত্ত্বেও এক প্রকার বাধ্য হয়ে চুক্তি অনুযায়ী সরকারি গুদামে চাল দিতে হচ্ছে তাদের।
এ ব্যাপারে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, ধান-চাল ক্রয়ে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে খোলাবাজারে দাম কিছুটা বেশি। এ দিকে সরকারি নীতিমালা অনুসারে গুদামজাত করা ধানের আদ্রতা ১৪ শতাংশের বেশি হলে সেই ধান কেনা যায় না। সে কারণে কৃষকরা গুদামে ধান বিক্রি করতে চাচ্ছেন না।
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, সরকারি ক্রয়কেন্দ্রগুলো এবার প্রয়োজনমতো ধান, চাল ক্রয় করতে পারছে না। খোলাবাজারের দামের সাথে সরকারের বেঁধে দেয়া দামের বিস্তর ফারাক হওয়ায় অভ্যন্তরীণ আমন মৌসুমে ধান চাল সংগ্রহ করার সরকারি অভিযান ব্যর্থ হতে চলেছে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার মিলাররা সরকারের সাথে চুক্তি আবদ্ধ হলেও অধিকাংশ মিলারই ওই চুক্তির বাইরে রয়েছেন। ধান-চাল বিক্রয়ে আসছেন না তারা সরকারি গোডাউনে।
এক কেজি ধান চালও বিক্রি করতে আসেনি কোনো কৃষক। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা শাহানা বেগম ও সরকারি গোডাউনের কর্মকর্তা মহি উদ্দিন জানান, এবার দেওয়ানগঞ্জ সরকারি গোডাউনে ৯৬৬ মেট্রিকটন চাল এবং ৭০৪ মেট্রিকটন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গত নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রয় উদ্বোধন করার কথা থাকলেও গোডাউনে কেউ ধান-চাল বিক্রয় না করায় উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে গত ২৬ ডিসেম্বর দেওয়ানগঞ্জ সরকারি গোডাউনে ধান-চাল ক্রয় উদ্বোধন করা হয়। উপজেলায় ১২ জন তালিকাভুক্ত মিলার রয়েছে। তাদের সাথে প্রায় প্রতিদিন যোগাযোগ করছেন খাদ্য কর্মকর্তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকার এক কেজি চালের দাম ৪৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। অথচ তা উৎপাদন করতে খরচ পড়ে ৫০-৫২ টাকা। এর সাথে ক্রয় কেন্দ্রে আনা-নেয়া ও শ্রমিক খরচে লোকসান হয় প্রতি কেজিতে ৬-৭ টাকা করে। সরকার ধানের দর ৩৩ টাকা কেজি নির্ধারণ করে দিয়েছে। অথচ হাটবাজারে দাম এর চেয়ে বেশি। এতে করে দেওয়ানগঞ্জে সরকারি গোডাউনে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যাহত হতে পারে। এ পর্যন্ত দেওয়ানগঞ্জ সরকারি গোডাউনে মাত্র ২০/২২ টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা