সাতক্ষীরায় শীতের তীব্রতার সাথে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ
বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা- মুহা: জিললুর রহমান সাতক্ষীরা
- ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০৫
গত বেশ কয়েক দিন ধরে সাতক্ষীরাসহ আশপাশের এলাকায় জেঁকে বসেছে শীত। পৌষের মাঝামাঝি সময় থেকে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। সাথে রয়েছে হিমেল ঠাণ্ডা বাতাস। এতে করে ঠাণ্ডাজনিত রোগে কাবু হচ্ছে শিশু ও বষস্করা।
জানা গেছে, সদরের সবগুলো হাসপাতালে জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রচণ্ড শীত ও কনকনে ঠাণ্ডায় শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু। তবে বৃদ্ধরাও আক্রান্ত হচ্ছেন এসব রোগে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন সেবা নিতে আসা জ্বর, ঠাণ্ডা ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখন প্রায় দ্বিগুণ।
চিকিৎসকরা বলছেন, চলতি বছরে হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়ার কারণে দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ। শীতে শিশুরা শ্বাসতন্ত্রের নানা ধরনের সংক্রমণ ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ সময় অনেকের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাও বেড়ে যায়।
সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০জনের বেশি রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সাতক্ষীরার শিশু হাসপাতালসহ রোগীর চাপ বেড়েছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল ও শহরের প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতেও। সাথে যুক্ত হয়েছে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীদের ভিড়।
গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুধু শীতজনিত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ৬ হাজারেরও বেশি। সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে ৩০ বেডের বিপরীতে বর্তমানে শিশু ভর্তি রয়েছে ৪৫জন। ফলে ওয়ার্ডের অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করে শিশু রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে এক শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আমেনা খাতুন নামে এক নারী। তিনি বলেন, বাচ্চাটা কয়েক দিন ধরে পাতলা পায়খানা হচ্ছে যার জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।
আশাশুনি থেকে সামছুর নাহার তার ছয় মাস বয়সী মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। তিনি বলেন, প্রথমে জ্বর হলে গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। অবস্থা খারাপ হলে ডাক্তার সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন।
এদিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ১৪টা বেডের বিপরীতে ভর্তি আছে ৩৫জন। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৫টা বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ২৪জন। বেড স্বল্পতায় এই শীতের মধ্যেও মেঝেতে থাকতে হচ্ছে রোগীকে।
পাটকেলঘাটা থেকে এক বছর বয়সী ফাতিনকে নিয়ে এসেছেন তার মা তজমিন সুলতানা। তিনি বলেন, সাত-আটদিন ধরে ঠাণ্ডা কাশি। কিছুতেই কমছে না। এজন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে কাটিয়া থেকে বৈশাখী নামের এক মহিলা তার সাত দিনের শিশুকে নিয়ে এসেছেন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয় শিশুটি।
সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ মেরিনা সুলতানা বলেন, আমাদের এখানে ১৪টি বেডের বরাদ্দ আছে কিন্তু শিশুভর্তি আছে ১৭ জনের বেশি। অধিকাংশ বাচ্চাদের সর্দি-কাশি জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট। গত কয়েক দিনে চিকিৎসা নিয়েছে ৫৫ জন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ শান্তনা মন্ডল বলেন, গত কয়েকদিন ১২৮জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এখানে বরাদ্দ মাত্র পাঁচটি বেড। বর্তমানে রোগী ভর্তি আছে ২৫জন। যে কারণে সব কিছু সামাল দিতে একটু ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের ইনচার্জ ডা: মো: আবুল বাশার আরমান বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। যাদের অবস্থা বেশি খারাপ তাদের হাসপাতালে ভর্তি রাখা হচ্ছে।
শিশু হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা: আশিক আহমেদ বলেন, শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা করতে শিশুর বিশেষ যতেœর প্রয়োজন। শীতজনিত রোগের বেশির ভাগই স্বল্পমেয়াদি ও সহজ চিকিৎসায় সেরে যায়। তবে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা অন্য কোনো ওষুধ সেবন করা ঠিক নয়।
সিভিল সার্জন ডা: আব্দুস সালাম বলেন, শীতজনিত রোগের চিকিৎসা সেবা দিতে সাতক্ষীরা সদর ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ আছে। এ কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এসব রোগ মোকাবেলা করা উচিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা