১২ বছরেও কাজে লাগেনি ৩ কোটি টাকার সেতু
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ঘাঘর নদীতে নির্মিত সেতুতে মই বেয়েও ওঠা যায় না- মো: সেলিম রেজা গোপালগঞ্জ
- ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ঘাঘর নদীর ওপর গোপালপুর সেতুর মূল কাজ শেষ হয়েছে সেই ১২ বছর আগে। এ অঞ্চলের মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে ২০১২ সালে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। প্রায় ২৪০ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুটি নির্মিত হলেও কোনো সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় একদিনের জন্যও এটি ব্যবহার করতে পারেনি জনসাধারণ। এমনকি মই বেয়েও সেতুতে ওঠতে পারা যায় না। এ কারণে প্রায় ১২ বছর ধরে সেতুটি অকেজো পড়ে আছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুর সংযোগ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ না করায় সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। কবে এ সেতুর সুফল পাওয়া যাবে সেই প্রশ্ন এখন এলাকাবাসীর। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অচিরেই এর সমাধান হবে।
সেতুটির পশ্চিম পাশে রয়েছে গোপালপুল করিমোন্নেছা উচ্চবিদ্যালয়, গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপালপুর দারুল উলুম কওমি মাদরাসা ও গোপালপুর মহিলা মাদরাসা। আর সেতুর পূর্বপাশের রাস্তাটি কোটালীপাড়া হয়ে বরিশাল চলে গেছে। অপরটি টুঙ্গিপাড়া হয়ে চলে গেছে পিরোজপুর। নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। সেতুর এক পাশে সংযোগ সড়ক নেই।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, কোটালীপাড়া উপজেলার গোপালপুর এলাকায় ঘাঘর নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে এ সেতুটি। দুই কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ২০১২ সালের জুন মাসে। জমি অধিগ্রহণ না করেই ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি ১৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা বাজেটে সেতুর সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হয়। গত বছর জুনের মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা। কিন্তু ধীরগতিতে কাজ চলার কারণে মেয়াদ বাড়িয়ে এ বছর জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় মেয়াদেও কাজ শেষ হবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান এলাকাবাসী।
পিঞ্জুরী ইউপি মেম্বার দবিউল হাওলাদার বলেন, পিঞ্জুরী ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের ঘাঘর নদীর ওপর সেতুটি নির্মিত হয়েছে। সেতুর পশ্চিম পার্শ্বে ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ড আর পূর্ব পার্শ্বে ৩টি ওয়ার্ড রয়েছে। পণ্য পরিবহনে এখনো অতিরিক্ত সাত-আট কিলোমিটার পথ ঘুরে চলাচল করতে হয়। এই সেতুটি চালু হলে ইউনিয়নবাসীর জীবনযাত্রার মান পাল্টে যাবে। শুধু চলাফেরায় নয়, স্থানীয় কৃষিপণ্য বিপণন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানাভাবে সমৃদ্ধ হতে পারবেন তারা। মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষে হয়েছে ১২ বছর আগে। অথচ সংযোগসড়ক নির্মাণ না করেই সেতুটি অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় রোমান সিকদার বলেন, অ্যাপ্রোচ সড়কটি আমাদের বাড়ির ওপর দিয়ে যাওয়ায় আমাদের জমি চলে যাবে। এজন্য বেশ কিছু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারপরও আমরা চাই সেতুুর অ্যাপ্রোচ সড়কটি হোক। তবে আমরা আমাদের ক্ষতিপূরণও চাই। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ আমাদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জোরপূর্বক আমাদের বাড়ির ওপর দিয়ে রাস্তা নিতে চাচ্ছে। ক্ষতিপূরণ না পেলে বেশ কিছু পরিবার পথে বসে যাবে।
পিঞ্জুরী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুজ্জামান খাঁন মিলন বলেন, সেতুর পশ্চিম পার্শ্বে কিছু জায়গা এখনো অধিগ্রহণ বাকি আছে। এ ছাড়া ঠিকাদারের ঢিলামির কারণে কাজ দেরি হচ্ছে।
সংযোগসড়ক নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জান্নাত কনস্ট্রাকশনের হাবিবুর রহমান বলেন, সেতুর পূর্ব পাশের কাজ শেষের পথে। পশ্চিম পাশের জায়গা এখনো অধিগ্রহণ করা হয়নি। আমাকে এই মাসের মধ্যে সাইড বুঝে দিলে ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবো। অন্যথায় আরো কিছুটা দেরি হবে।
গোপালগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক বলেন, সেতুর পশ্চিমপাড়ে জমিসংক্রান্ত জটিলতার কারণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। অচিরেই জটিলতা কাটিয়ে সংযোগসড়ক নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।