১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬
`

সাতকানিয়ায় রাতের আঁধারে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি

অনাবাদি হচ্ছে একরের পর একর কৃষিজমি
সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ইটভাটার জন্য প্রতিনিয়ত এভাবে কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফসলি জমির মাটি : নয়া দিগন্ত -


চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় রাতের আঁধারে অবাধে কেটে নেয়া হচ্ছে কৃষি জমির টপ সয়েল। ফলে জমিগুলো উর্বরতা হারিয়ে অনাবাদি জমিতে রুপান্তরিত হচ্ছে। সেই সাথে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ফসল উৎপাদনের উপযোগী মাটি হলো জমির ওপরের অংশ বা টপ সয়েল। এই টপ সয়েল একবার কেটে নিলে তা পূরণ হতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ বছর।

এদিকে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুসারে কৃষিজমি, পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কাটলে অথবা অনুমোদন ছাড়া নদী বা হাওর ও চরাঞ্চল থেকে মাটি কাটা হলে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ আইন বলবৎ থাকলেও প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর ভূমিকা কিংবা মাটিখেকোদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো কিছু কিছু অভিযান পরিচালনা করলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না।
জানা যায়, জমির মালিকরা সামান্য টাকার লোভে একটি সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে নিজেদের ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর আমন ধান কাটার পর থেকে বর্ষাকাল শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এক শ্রেণীর অসাধু মাটি ব্যবসায়ী গরিব কৃষক ও জমির মালিকদের টাকার লোভ দেখিয়ে আবাদি জমির মাটি কিনে নেয়।

জমির মালিকরা টপ সয়েল বিক্রির কুফল সম্পর্কে না জানার কারণে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করেই নামমাত্র মূল্যে মাটি বিক্রি করেন। প্রতি বছর বিশেষ করে ইটভাটার মৌসুম শুরু হওয়ার পর স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র মাটি ব্যবসায়ীদের সাথে সিন্ডিকেট করে জমির মালিকদের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য করেন বলেও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, সাতকানিয়া উপজেলার কেওঁচিয়া, ঢেমশা, ছদাহা, ধর্মপুর, বাজালিয়া, নলুয়া, খাগরিয়া, মাদার্শা, সাতকানিয়া সদর, এওচিয়া এলাকার আবাদযোগ্য কৃষি জমিগুলো থেকে রাতের আঁধারে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে প্রতিদিন শত শত ট্রাকে করে উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় শতাধিকের কাছাকাছি ইটভাটা থাকায় এখানে মাটির চাহিদাও বেশি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ী জানান, ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে তারা মাটির ব্যবসা করেন। ভাটার দূরত্ব অনুযায়ী পরিবহন খরচের ওপর মাটির দাম কম-বেশি হয়ে থাকে। এর মধ্যে ইট তৈরির উপযোগী ও ভাটার কাছাকাছি জমির মাটির দাম তুলনামূলক বেশি। এখানকার বেশির ভাগ মাটি ইটভাটায় ব্যবহৃত হয়। প্রতিবছর ইটভাটার মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে আবাদকৃত কৃষি জমিগুলোর মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় ইটভাটায়। এভাবে মাটিগুলো ইটভাটায় এনে পাহাড় সমান উঁচু ঢিবি করে রাখা হয়। এভাবেই প্রতিবছর উর্বর কৃষি জমিগুলোর মাটি কেটে নেয়ার ফলে সাতকানিয়ায় দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে আবাদি কৃষি জমির পরিমাণ। ইতোমধ্যে শত শত একর কৃষিজমি বছরের পর বছর অনাবাদি হয়ে পড়ে রয়েছে।

উপজেলার মো: খোরশেদ, মো: হানিফ ও জামাল হোসেন নামে কয়েকজন জমির মালিক জানান, তাদের পার্শ্ববর্তী জমির মালিক মাটি বিক্রি করে দিয়েছে। এতে মাটি ব্যবসায়ীরা জমিগুলো থেকে ১০-১৫ ফুট কিংবা তার চেয়েও বেশি গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ায় তাদের জমিগুলো চাষাবাদের জন্য নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই নিজেদের জমির মাটিও বিক্রি করে দিতে হয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, ফসল উৎপাদনের জন্য মাটির যে গুণাগুণ থাকা দরকার তার সবটুকুই থাকে জমির টপ সয়েলে। এই টপ সয়েল কেটে নিয়ে গেলে তা পূরণ হতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস জানান, মাটি কাটার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন সজাগ আছে। এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া গেলেই আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করি। তবে সাতকানিয়া উপজেলার আয়তন বড় হওয়ায় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষি জমির মাটি ও পাহাড় কাটার বিষয়ে সংবাদ পাওয়ার পর সেখানে অভিযানে যাওয়ার আগেই ওসব মাটিখেকোরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement