০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`

মরণফাঁদ ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ৬৫ দুর্ঘটনায় নিহত ২৫ আহত ৯০

এক্সপ্রেসওয়েতে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে দুই ব্যক্তি : নয়া দিগন্ত -


ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে গত বছর ৬৫টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। গত ১৫ দিনেই চারটি দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজনসহ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক দেওয়ান আজাদ হোসেন বলেন, গত ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে গত ২ জানুয়ারি ’২৫ পর্যন্ত এক বছরে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ৬৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৯০ জন আহত হন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্বোচ্চ গতিসীমার নির্দেশনা না মানা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, অবৈধ ওভারটেক করা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বহীনতাসহ এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চালানোর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা না থাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বৈরী আবহাওয়ায় কিংবা ঘন কুয়াশার সময় যানবাহন চলাচলে সতর্ক না হওয়ায়ও দুর্ঘটনা ঘটে।

দেওয়ান আজাদ হোসেন হোয়াটস অ্যাপে তথ্য দিয়ে জানান, সার্ভিস লেনে গাড়ি চলাচলের জন্য সড়ক বিভাগ গতিসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এক্সপ্রেসওয়েতে কার, বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাসের সর্ব্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও মিনি ট্রাকসহ সব মালবাহী যানের সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার এবং মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকের চালকরা এসব নীতিমালা মানছেন না।

তিনি আরো জানান, পুলিশ বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে, মাইকিং করে ও লিফলেট বিতরণ করেও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে পারছেন না। গাড়ির চালক পুলিশের সামনে গতি কমালেও পরে গতি বাড়িয়ে দেয়। দেওয়ান আজাদ হোসেন জানান, গাড়ি চলাচলের নিয়ম বেঁধে দেয়া স্বত্বেও ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে যেন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। দুর্ঘটনা রোধে ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারি কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না। সহজ ও নিরাপদ সড়ক যাতায়াত নিশ্চিত করতে আট লেনের এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হলেও শুরু থেকেই যানবাহনের বেপরোয়া গতির কারণে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।
হাসাড়া হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদির জিলানি মোবাইল ফোনে জানান, ঘন কুয়াশার কারণে গত ১৫ দিনে চারটি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জনের প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে গত ২৭ ডিসেম্বর ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় একাধিক গাড়ির পরপর পেছন দিক থেকে ধাক্কায় একই পরিবারের চারজনসহ ছয় জনের মৃত্যু হয়। গত ৩ জানুয়ারি দুইটি পৃথক দুর্ঘটনায় চার জনের মৃত্যু হয়।

ওসি আরো জানান, গাড়ির চালকদের সাথে ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি থাকায় সেটি পরীক্ষা করতে অনেক সময় লাগে। ফলে রাস্তার সব গাড়িচালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। বিআরটিএ দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালককে নবায়নসহ মূল লাইসেন্স ফেরত দিলে লাইসেন্স পরীক্ষা করা সহজ হতো। টোল আদায়ের সময় গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র পরীক্ষা করলে গাড়ির চালক এবং মালিক সচেতন হবে। ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে গত এক বছরে চার শতাধিক মামলা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, হাইওয়েতে পর্যাপ্ত আলো নেই। রাস্তার অনেক লাইট নষ্ট। পথচারীরা ইচ্ছেমতো রাস্তা পার হচ্ছে। যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে।
কর্তব্যরত হাইওয়ে পুলিশ জানায়, টোল প্লাজায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের সিসি ক্যামেরা থাকলেও পুলিশ এ ক্যামেরার সুবিধা নিতে পারছে না। হাইওয়ে পুলিশ রাস্তায় সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারলে, কোনো গাড়ি ট্রাফিক আইন অমান্য করলে সাথে সাথে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পরবর্তী পুলিশ স্টেশনে তথ্য পাঠিয়ে গাড়ি আটকানো যাবে। এতে রাস্তায় শৃঙ্খলা অনেকটা ফিরে আসবে ও দুর্ঘটনা কমানো যাবে। হাইওয়ে পুলিশ চলচলকারী যানবাহন স্বল্পতার কারণেও তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।
তিনি ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা রোধে দ্রুতগতির গাড়ি ও ট্রাফিক আইন অমান্যকারীকে শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পাশাপাশি পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান।


আরো সংবাদ



premium cement