০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নদীর নাব্যতা ফেরাতে জোয়ারধার চালুর দাবি

পলি জমে নালায় পরিণত হয়েছে হরি নদী। অন্যদিকে চলছে চর দখল : নয়া দিগন্ত -


পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পোল্ডার ব্যবস্থার কারণে খুলনা সাতক্ষীরা ও যশোর অঞ্চলে বিশেষ করে বিল ডাকাতিয়া ও ভবদহের নদ-নদীতে পলি ভরাট হয়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ভরাট হওয়া এসব নদ-নদীর নব্যতা ফেরাতে পুনঃখনন করে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) বা জোয়ারধার বাস্তবায়নের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন নদী ও পানি গবেষকরা।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আট উপজেলায় ১৫ লাখ মানুষ বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দী হয়ে পড়ে। এ অঞ্চলের প্রবাহিত নদ-নদীগুলো পলি সমস্যার কারণে একের পর এক নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে। ইতোমধ্যে হামকুড়া, শৈলমারী, পূর্ব শালতা, ভদ্রা ও আমতলী নদী মারা গেছে। গুয়েচাপা এবং জয়খালী নদীও মৃত্যুর প্রহর গুনছে। তেলিখালী ঘ্যাংরাইল ও পশ্চিম শালতা নদী ভুগছে নাব্যতা সঙ্কটে। বর্ষা মৌসুমে বিলগুলোর সাথে বসতবাড়িও ডুবে যায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে এ অঞ্চলের নদী-নদী-বিল ও মানুষের।

বিল ডাকাতিয়া ভবদহ এলাকার বিল ভায়না, খুকশিয়া ও কেদারিয়া বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন করে দেখা গেছে এ পদ্ধতির মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূর করা এবং নদী বাঁচানো সম্ভব। ভবদহ এলাকার বিগত ১০ বছর টিআরএম বন্ধ থাকায় তেলিগাতি ঘ্যাংরাইল অববাহিকায় নাব্যতা সঙ্কট ও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, হামকুড়া অববাহিকায় টিআরএম বাস্তবায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকারের বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান আইডব্লিউএম সমীক্ষার ভিত্তিতে একটি প্রকল্প প্রণনয়ন করে মধুগ্রাম ও মাধবকাটি বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন করার সুপারিশ করা হয়েছে। সরকার ঘোষিত বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০তে হামকুড়া ও ঘ্যাংরাইল অববাহিকায় টিআরএম বাস্তবায়ন গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। তাদের উদ্যোগই কেবল সম্ভব নদ-নদী খনন ও সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করা। ইতঃপূর্বে হামকুড়া শৈলমারী পূর্ব শালতা একাধিকবার খনন করলেও তা পলি দ্বারা আবার ভরাট হয়ে গেছে। সম্প্রতি জয়খালি ও ডুমুরিয়া সদরমুখী ভদ্রা নদী ও মাগুরখালির পশ্চিম শালতা নদী খনন করা হলেও মাত্র ২-১ বছরের মধ্যে আবার ভরাট হয়ে গেছে।
হামকুড়া রিভার মুভমেন্ট কমিটির সভাপতি সেলিম আকতার স্বপন বলেন, প্রতি বছর ভূপৃষ্ঠের চাপে এ এলাকার ভূমি বসে যায়। পোল্ডারের আগে বসে যাওয়া ভূমি পলি দ্বারা পূরণ হতো এবং আরো উঁচু হতো। এখন শুধু বসেই যাচ্ছে এবং জলমগ্ন হচ্ছে।

বিশিষ্ট নদী গবেষক, সাংবাদিক ও লেখক গৌরাঙ্গ নন্দী বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতার কারণ পোল্ডার ব্যবস্থার কারণে প্লাবনভূমির সাথে জোয়ারের নদীর বিচ্ছিন্নতা। পোল্ডার ব্যবস্থার আগে নদীর জোয়ারে আসা বিপুল পরিমাণে পলি প্লাবনভূমিতে অবক্ষেপিত হতো। মাটির বাঁধ স্লুইসগেট প্রভৃতির কারণে জোয়ারে আসা পলি গেটে আটকা পড়ে নদীতে পতিত হয়। এতে নদীর বুক উঁচু হয়, একসময় নদী শুকিয়ে মরে যায়। যেহেতু বিল বা প্লাবনভূমি নিচু, তাই বৃষ্টির পানিও আটকে গিয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। জলাবদ্ধতা দূরীকরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে ওই নদীর সাথে বিলের সংযোগ ঘটানো। কিন্তু তাতে আগের মতো হবে না। এ কারণে জোয়ারের পানি বিলে প্রবেশ করাতে হবে। বিলের মধ্যে পলি অবক্ষেপিত করাতে হবে। এই পদ্ধতিকেই সাধারণভাবে টিআরএম বলা হয়।

তিনি আরও বলেন, বিলের পাশের নদী একেবারে শুকিয়ে গেলে তখন টিআরএম বাস্তবায়ন করা যায় না। তাই, পর্যায়ক্রমে আলাদাভাবে এক একটি বিলে টিআরএম করাতে হয়। টিআরএম হলে নদী সচল ও গতিশীল হয় এবং নদী বেঁচে থাকে। মনে রাখতে হবে টিআরএম প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া। এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে তবেই এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। মানুষকে ক্ষতিপূরণ না দিয়ে টিআরএম বাস্তবায়ন সম্ভব না।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণের পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, যশোর খুলনা ও সাতক্ষীরা উপকূল অঞ্চলে নদী রক্ষা করতে ৩৫ বছর ধরে কাজ করছি। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি এলাকার জীবিত নদীগুলোকে রক্ষা করা এবং মৃত নদীগুলোকে পুনর্জীবিত করা ছাড়া বিকল্প আর কোনো রাস্তা নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান বলেন, আসলে এটা নিয়ে ব্যাপক সমীক্ষা করা প্রয়োজন। সমীক্ষা চলছেও। সমীক্ষার মাধ্যমে এর একটা ভালো সমাধান হবে। নদী খনন করলেই পলি এসে আবার ভরাট হয়ে যায়। টিআরএম বাস্তবায়ন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জোয়ারভাটা অর্থাৎ টিআরএম একটা ভালো সমাধান হতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement