০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`

দখল-দূষণে অস্তিত্ব সঙ্কটে বুড়িচংয়ের ২০৩ খাল

তদারকির অভাবে ভরাট হয়ে গেছে বেশির ভাগ খাল
ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়া একটি খাল হ নয়া দিগন্ত -


কুমিল্লার উত্তরে সবচেয়ে নিকটবর্তী উপজেলা হচ্ছে বুড়িচং। এ উপজেলার উত্তরে দেবিদ্বার ও ব্রাহ্মণপাড়া, পশ্চিমে চান্দিনা, দক্ষিণে আদর্শ সদর এবং পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। ১৬৩.৭৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১৭২টি গ্রাম ও ১৫২টি মৌজা রয়েছে। প্রায় দুই লাখ ৯৯ হাজার ৭০৫ জন মানুষের বসতি এ উপজেলায়। আর এ বুড়িচং উপজেলারই ২০৩টি খাল অস্তিত্ব সঙ্কটে আছে।
স্থানীয় ভূমি অফিসের সূত্রমতে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ২০৩টি খালের অস্তিত্ব থাকলেও বর্তমানে বেশির ভাগের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট দফতরের সঠিক তদারকির অভাবে খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। কোনো কোনো স্থানে খালের চিহ্নটুকুও নেই। ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে খালগুলো দখল করে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
আরো জানা যায়, ৯টি ইউনিয়নে ছোট বড় ২০৩টি খালের মধ্যে রাজাপুর ইউনিয়নে ১১০টি, বাকশীমুল ইউনিয়নে তিনটি, বুড়িচং সদর ইউনিয়নে ২৬টি, পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নে তিনটি, ষোলনল ইউনিয়নে পাঁচটি, ময়নামতি ইউনিয়নে ৯টি, ভারেল্লা উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নে ১৬টি ও মোকাম ইউনিয়নে ৩০টি খাল রয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন ইউনিয়নে কাগজে কলমে খালের সংখ্যা নির্ধারণ করা থাকলেও বাস্তবে তাদের দেখা যায় না। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও রাস্তাঘাট নির্মাণে সহজীকরণে বিভিন্ন গ্রামের খাল ও নালাগুলো ভরাট করে ফেলা হয়েছে।
জানা যায়, এ উপজেলার অধিবাসীদের মধ্যে প্রায় ৪৮ হাজার মানুষ কৃষিকাজে জড়িত। তাদের প্রধান কৃষিপণ্যই ধান। সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয় পয়াতের জলা নামক এলাকায়। কিন্তু এখানে সামান্য বৃষ্টি হলেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। দুর্ভোগ পোহাতে হয় কৃষকদের। এ দুর্ভোগ লাঘবে বিএডিসি কয়েকটি খাল পুনঃখনন করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। পরে খালগুলোর খনন কাজ শুরু করা হলেও পরিপূর্ণভাবে শেষ না করায় ওই খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।
বিশেষ করে সদর বাজারের পশ্চিম পাশের খালটি কয়েকজন প্রভাবশালীর কারণে খনন কাজ করাই হয়নি। প্রভাবশালীদের কারো বাড়ি, কারো দোকান রক্ষা ইত্যাদি অজুহাতে খনন কাজ আর এগোয়নি।

ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ সুজন বলেন, পয়াতের জলা থেকে হরিপুর-জরইন হয়ে যে খালটি গিয়েছে, তা ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। এতে কৃষকদের আবাদি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। হরিপুর জরইনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খালটি যে করেই হোক পুনঃ খনন করা দরকার।
পয়াতের জলার পানি নিষ্কাশন ও খাল পুনঃখনন আন্দোলনের মুখপাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন বলেন, পয়াতের কৃষকদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে খালটি পুনরায় খনন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরে কয়েকবার আবেদন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করা হয়েছে। অচিরেই বাজারের খালের ময়লা পরিষ্কার করা না হলে উপজেলা শহীদ মিনারে গণ-অনশন কর্মসূচি পালন করব।

বুড়িচং মডেল অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষক কবির হোসেন বলেন, খালগুলো খনন না করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কৃষকের ফসল নষ্ট হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত খালগুলো খননের দাবি জানাচ্ছি।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহিদা আক্তার বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে একটি তালিকা প্রণয়ন করেছে। সেই তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল অফিসকে খনন করার জন্য ভাগ করে দিয়েছি। আশা রাখি দ্রুত খনন কাজ শুরু হবে।


আরো সংবাদ



premium cement