বন্যায় ভিটেমাটি হারিয়ে এখনো তাঁবুতে বসবাস
- তিতাস (কুমিল্লা) সংবাদদাতা
- ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
কুমিল্লার তিতাসে বন্যার কবলে গোমতী নদীতে ভিটেমাটি হারিয়ে প্রায় পাঁচ মাস ধরে তাঁবুর নিচে বসবাস করছে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বাদশা মিয়ার পরিবার। আপাতত ছিপ-বড়শি দিয়ে মাছ ধরে যা পান তা দিয়েই কোনোভাবে স্ত্রী আর দুই মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবারটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের আগস্ট মাসে কয়েক দিনের টানা ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার ভিটিকান্দি, কলাকান্দি ও নারান্দিয়া ইউনিয়নের গোমতীর তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়। গোমতীর প্রবল স্রোতে নারান্দিয়া পূর্ব ও পশ্চিমপাড়ের প্রায় ৬০টি পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ঘরবাড়ি হারিয়ে অধিকাংশ পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। ভিটেমাটি হারিয়ে অনেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারলেও এখনো অন্যের বাড়িতে তাঁবু টানিয়ে থাকেন বাদশা মিয়া। বাদশা মিয়া (৩৯) নারান্দিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ নারান্দিয়া পশ্চিম পাড়ের মৃত আবদুল মতিনের ছেলে।
সরেজমিনে নারান্দিয়া পশ্চিম পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড়ে মজিব নামে একজনের পরিত্যক্ত পাকাভিটায় বাঁশ ও ত্রিপল টানিয়ে বসবাস করছেন বাদশা মিয়া। নদীর পাড়ে বেঁেধ রাখা একটি ছোট কোষা নৌকার মাচায় ছিপ-বড়শি দিয়ে মাছ ধরে বিক্রি করে যে অর্থ পান তা দিয়েই বাজার সদাই করতে হয় বলে জানান তিনি।
বাদশা মিয়া বলেন, আরেকজনের জায়গায় পাঁচ মাস ধরে তাঁবু টাঙিয়ে আছি। মাছ বিক্রি করে যা পাই তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই মাঝেমাঝে ডেকোরেটরের কাজসহ টুকটাক কাজ করি। এখন কোথায় থাকব, কী করব, সেই চিন্তায় আছি।
কয়েকটি বাঁশ, টিন আর গাছের ডালপালা দিয়ে তৈরি ঢেরার ভেতর থেকে তসবিহ হাতে বেরিয়ে এসে বাদশা মিয়ার প্রতিবেশী নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত জোহরা আক্তার বলেন, আমার বাড়িঘর নদীয়ে ভাইঙ্গা লইছে। নামাজ পড়ি, কোরআন তেলাওয়াত করি। বাড়িঘর ভাইঙ্গা তছনছ অইয়া গেছেগা।
নারান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো: আরিফুজ্জামান খোকা বলেন, বন্যার কবলে বাড়িঘর, কবরস্থান, বিভিন্ন স্থাপনাসহ নারান্দিয়া গ্রামের গোমতী নদীর দুইপাড়ের প্রায় ৬০টি পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কয়েকটি পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে। পানি কমায় ঝুঁকিতে থাকা বাড়িঘরগুলো নদী ভাঙনের কবলে পড়ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমাইয়া মমিন বলেন, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাঠিয়েছি। এখনো বরাদ্দ আসেনি। বাদশা মিয়ার যদি কোনো আবাসস্থল না-ই থেকে থাকে, তাহলে তো উনি ভূমিহীন। আমাদের কাছে আবেদন করলে পরবর্তীতে আমরা সুযোগ পেলে পুনর্বাসনের চেষ্টা করব।