নাসিরনগরে ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় বিপর্যস্ত পরিবেশ
৩০ ভাটার অধিকাংশই অবৈধ অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ- আছমত আলী নাসিরনগর ( ব্রাহ্মণ বাড়িয়া)
- ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০, আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৯
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় ইটভাটা মালিকরা মানছেন না কোনো নিয়ম। তদারকি ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও ভাটাগুলোতে কৃষির ক্ষতি ও দেশের ভূ-প্রকৃতি ধ্বংস করে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। এতে ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, কমছে চাষাবাদের জমি ও গাছপালা। আইন অমান্য করে কাঠ পোড়ানো হলেও স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোনো তৎপরতা বা নজরদারি।
সূত্র মতে, জেলার নাসিরনগর উপজেলার প্রায় ৩০টির মতো ইটভাটার মধ্যে অধিকাংশের অনুমতি নেই স্থানীয় পরিবেশ অধিদফতরের।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার চাতলপাড়, গোয়াল নগর, কুন্ডা, নাসিরনগর, গোকর্ণ, পূর্ভাগ, বুড়িশ্বর ও হরিপুর ইউনিয়নের আবাদি জমির ওপরের অংশ এক থেকে দুই ফুট গর্ত করে কাটা হচ্ছে মাটি। কোথাও কোথাও কোমর সমান গর্ত। উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে রোপণ করা ধানগাছের চারাসহ মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়। মাটি কাটার কাজ দ্রুত করার জন্য উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় এক্সকেভেটর ব্যবহার করতেও দেখা গেছে। আর এসব মাটি অবৈধ ট্রলিতে বোঝাই করে ইটভাটায় নেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন ইটভাটায় মাটি বহনের জন্য ১৫০-২৫০টি ট্রলি নিয়োজিত রয়েছে।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের বুড়িশ্চর ও আশুরাইল জনবসতি, রাস্তার ও স্কুলের পাশে দ্’ুটি ইটভাটা নাসিরনগর খুকুরিয়া ব্রিজের কাছে একটি এবং তিতাস নদীর উত্তর পাশে নাসিরনগর -ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে চারটি ইটভাটা রয়েছে। কয়েকটির সাময়িক অনুমতি থাকলেও বেশির ভাগেরই অনুমতি নেই। এসব ভাটা থেকে ট্রাক ও ট্রলিতে ইট সরবরাহ করার ফলে সড়ক ভেঙে খানাখন্দে ভরে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদা এবং রোদে ধুলোবালুতে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কুন্ডা ইউনিয়নের নাসিরনগর-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক মহাসড়ক ও তিতাস নদীর দু’পাশে ইটভাটাগুলো গড়ে তুলেছে । গোকর্ণ ও পূর্বভাগ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামেও এমন চিত্র দেখা যায়।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে ভারী যানবাহন দিয়ে ইট বা ইটভাটার কাঁচামাল পরিবহন নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা জামাল মিয়া, ওয়াজ উদ্দিনসহ কয়েকজন জানান, ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলোবালুতে বাড়িঘরে থাকা দায়। কালো ধোঁয়ার কারণে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে ফসল। এভাবে চলতে থাকলে ভাটার চারদিকের জমিগুলো এক সময় অনাবাদি হয়ে পড়বে। ভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার লোকজন প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। হরিপুর ইউনিয়নের জমিদার বাড়ি ও তিতাস নদীর পাশে সততা, রয়েল, মিজান ব্রিকসের কোনো অনুমতি নেই। তারা উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: আল মামুন নয়া দিগন্তকে বলেন, সচেতন করার পরও তারা কথা শুনছেন না। মাটিকাটা জমিতে উর্বরা শক্তি ফিরিয়ে আনতে ১০-১৫ বছর সময় লাগে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনা নাছরিন বলেন, অবৈধভাবে কোনো ইটভাটা পরিচালনা করতে দেয়া হবে না। অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদের নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো: খালেদ হাসান বলেন, আমরা আমাদের জায়গা থেকে যা যা করণীয় সবই করছি। মেসার্স শিহাব ব্রিকস, মেসার্স মিজান ব্রিকস নামের ইটভাটা দু’টিকে আগেই অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শিগগিরই অবৈধ সব ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা