০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ৬ রজব ১৪৪৬
`

জনবল সঙ্কট, নিম্নমানের খাবার কলাপাড়ায় বেহাল স্বাস্থ্যসেবা

-

চিকিৎসকসহ জনবল সঙ্কটে কলাপাড়ার ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে আসা রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন যথাযথ চিকিৎসা সেবা থেকে। একই দশা উপজেলার কুয়াকাটা ২০ শয্যার হাসপাতাল ও মহিপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কলাপাড়া হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৩৫০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। মাত্র ৩-৪ জন চিকিৎসক তাদের অফিস চলাকালীন সময়ের মধ্যে এ পরিমাণ রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন না। বাধ্য হয়ে ভিজিট দিয়ে রোগীদের অফিস সময়ের পরে বাইরে চেম্বারে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। ফলে দরিদ্র রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই। একইভাবে ভর্তি হওয়া রোগীর চাপও থাকছে অনেক বেশি। ৫০ শয্যার উপজেলা সদরের এ হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, শয্যার চেয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। কলাপাড়া উপজেলাসদরসহ কুয়াকাটা এবং মহিপুর নিয়ে মাত্র ১১ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসককে অধিকাংশ সময় প্রশাসনিক নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। এর মধ্যে একজন চিকিৎসক প্রেষণে পটুয়াখালী রয়েছেন। অথচ চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৬ জনের। কলাপাড়া উপজেলা সদরে মাত্র চারজন চিকিৎসক বহির্বিভাগে দৈনিক তিন-সাড়ে তিন শ’ রোগীর চিকিৎসা সেবা সামাল দিচ্ছেন। যাতে একেকজন রোগীকে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট সময় দেয়া সম্ভব নয়। একইভাবে কর্মচারীর ৭৬টি পদ খালি রয়েছে। সমস্যার যেন শেষ নেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করাতে হয় আউটসোর্সিংয়ের জনবল দিয়ে। একই দশা কুয়াকাটা হাসপাতালের।
হাসপাতালে সরকারিভাবে টাইফয়েড, হেপাটাইটিস বি-সি, প্রেগনেন্সী, কিডনি, জন্ডিস, সিকলিস, এইডস ভাইরাস, এক্সরে, ডায়াবেটিকসহ অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা স্বল্পমূল্যে করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু রোগীদের অভিযোগ, কতিপয় চিকিৎসক তাদের নিজেদের পছন্দের ক্লিনিকে পরীক্ষার জন্য পাঠান। তবে বেশকিছু ওষুধপত্র রোগীরা বিনামূল্যে পেয়ে আসছেন। কিন্তু এ বছরের জুন মাসের পর থেকে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষানিরীক্ষার জরুরি কিছু মেডিসিন ঠিকাদার সরবরাহ না করায় রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন চিকিৎসা সেবা থেকে। হাসপাতালের বাথরুম-টয়লেট পরিচ্ছন্নতা নিয়ে রোগীদের অভিযোগ রয়েছে। কতিপয় নার্স-আয়া, ক্লিনারদের বিরুদ্ধে রোগীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের কথা শোনা গেছে।

রোগীদের খাবারের মান নিয়ে উঠেছে এন্তার অভিযোগ। মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগী পারভিন জানান, চারদিন আগে সে ভর্তি হয়েছেন। কিছু ওষুধপত্র হাসপাতাল থেকে পাচ্ছেন। বাইরে থেকে কিনতেও হয়েছে। জানালেন, সকালে রুটি আর একটি কলা দেয়া হয়েছে। রাতে ও দুপুরে দেয়া হয়েছে একটি করে সেদ্ধ ডিম দিয়ে আলুর ঝোল। এমটাই চলে অধিকাংশ দিন। তবে দুপুরে বয়লার মুরগি রান্নার কথা জানালেন বাবুর্চি।
কলাপাড়া হাসপাতালে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার জেএইচ খান লেলিন জানান, খাবারের মান নিয়ে ঠিকাদারকে বহুবার সতর্ক করা হয়েছে। আবারো ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন। তিনি জানালেন, কলাপাড়া উপজেলা ছাড়াও পাশের আমতলী, তালতলী ও রাঙ্গাবালী উপজেলার অসংখ্য রোগী এ হাসপাতালে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। চিকিৎসক সঙ্কট দূর হওয়া প্রয়োজন বলে জানালেন তিনি।
হাসপাতালের আরেক বড় সমস্যা তিন ফেইজ বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা। সিঙ্গেল ফেইজ সংযোগ থাকায় লোডশেডিং-এর কবলে পড়তে হয়। জেনারেটর থাকলেও সবসময় জালানি সঙ্কুলান দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। আর বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে ভ্যাকসিন মান নিয়ন্ত্রণ করে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা অসম্ভব হয়ে ওঠে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement