নিকলীতে যত্রতত্র বালু তোলার হিড়িক, ভাঙনের মুখে বসতি
- আলি জামশেদ নিকলী (কিশোরগঞ্জ)
- ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৯
কিশোরগঞ্জের নিকলীসহ হাওর অঞ্চলের নদীগুলোতে প্রভাবশালী একটি চক্র অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে চলেছে। সরকারি ইজারা ছাড়াই প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে চলছে তাদের বালু উত্তোলনের মহোৎসব।
ঘোড়াউত্রা নদীসহ অন্যান্য হাওর এলাকার নদীগুলোতে প্রতিদিন গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত বালু উত্তোলনের ফলে অস্তিত্ব হারাচ্ছে নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি ও বিক্ষিপ্ত স্থানের বসতিগুলো। নদীর তীর রক্ষায় এক দিকে চলছে সরকারের শত শত কোটি টাকার কাজ, অপর দিকে বালুখেকোরা বেপোরোয়াভাবে বালু উত্তোলন করেই চলেছে। এলাকার জনবহুল রাস্তার পাশে চোখ মেললেই ধরা পড়ে অবৈধ এসব বালু ও মাটির স্তূপ।
জানা গেছে, সাধারণ জনগণকে ভুল বুঝিয়ে আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে উন্নয়নমূলক কাজের দোহাই দিয়ে চলছে এই বালু উত্তোলন। নদীগুলো সরকারের হলেও সংশ্লিষ্টদের তদারকি না থাকায় বালু যেন রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও প্রভাবশালীদের উপার্জনের লোভনীয় উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই পরিবেশ ধ্বংসের এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন বালুখেকোরা। অবৈধ পথে কোটিপতি বনে যাওয়া এসব লোকের বিরুদ্ধে দুদকের সুষ্ঠু নজরদারির দাবি তোলে সুশীলসমাজ ও সচেতন মহল।
স্থানীয়রা জানায়, নদীর বালু বিক্রি করেই কোটিপতি বনে গেছেন নিকলী সদর, ছাতিরচর, সিংপুর, গুরই, কারপাশাসহ বাজিতপুর উপজেলার হিলোচিয়া, দীঘিরপাড়, হুমাইপুর, মাইজচর, দিলালপুর ও অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতিদের প্রায় সবাই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিকলীর ছাতিরচরের মরহুম নসু মিয়া, মরহুম মাওলানা নুর উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন, দুদু মিয়া, জঙ্গু মিয়া, মধু মিয়া ও কবি মহিবুর রহিমের মতো অন্ততপক্ষে কয়েক শ’ পরিবার নদীভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে এলাকাছাড়া হয়েছে। নদীর এক দিক দিয়ে যখন বালু উত্তোলনকারীরা ড্রেজার দিয়ে বালু তোলেন, তখন নদীর আশপাশের উঁচু স্থান ভেঙে নদী তার গর্তের ঘাটতি পূরণ করে। এভাবেই সৃষ্টি হয় নদীভাঙনের খেলা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, সিংপুর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি হারুন অর রশিদসহ জড়িত রয়েছেন শান্তি রহমান ও আবুল্লা সর্দার। তবে, মোবাইল ফোনে হারুন অর রশিদ ও আবুল্লা সর্দার জানান, বালু উত্তোলন বিষয়ে তাদের কিছুই জানা নেই।
এ দিকে থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ে শান্তি রহমান বালু উত্তোলন হচ্ছে স্বীকার করলেও তিনি হদয়, খোকন, ফকরুলসহ আরো চারজনের নাম উল্লেখ করে বলেন, তারাও রীতিমতো বালু উত্তোলন করেন। তবে, বিএনপির কর্মী দাবিদার হৃদয় জানান, তিনি বালু উত্তোলন করে দিয়েছেন জিও ব্যাগের জন্য। এ ছাড়া তিনি ধনু নদীর পূর্ব পাড়ের হেমারচর অংশ থেকে বালু উত্তোলন করেননি বলে জানান।
নিকলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বদরুল মোমেন মিঠু বলেন, বালু উত্তোলনের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আমিও আইনি হস্তক্ষেপ কামনা করি। হোক তিনি যেকোনো দলের।
নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া আক্তার ধনু নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান। প্রশাসনকে ম্যানেজের কথাটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত বলে উড়িয়ে দেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা