পদ্মার তলদেশ পলি জমে জেগে উঠেছে ধু-ধু বালুচর
- শফিউল আযম বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা
- ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০৫, আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৬
পলি-বালু জমে ভরাট হয়ে পদ্মার তলদেশ উপরে উঠে এসেছে। ফারাক্কা পয়েন্টে পানি নিয়ন্ত্রণ করায় আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে পদ্মার প্রবাহ। নদীর বুকে জেগে উঠেছে মাইলের পর মাইল ধু-ধু বালুচর। সেই সাথে পদ্মাসংযুক্ত ৪৫টি নদ-নদী প্রায় পানিশুন্য হয়ে পড়ছে। এতে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চচলের শিল্প, নৌ-যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জীববৈচিত্র্য ও কৃষিখাত হুমকির মুখে পড়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ ৩০ বছর মেয়াদি পানি চুক্তির পর পাবনা হাইড্রোলজি অফিস থেকে পদ্মায় পানি প্রবাহের কোনো তথ্য সাংবাদিকদের দেয়া হয় না। জিজ্ঞেস করলে বলা হয়, যৌথ নদী কমিশন দিতে পারবে। পদ্মা নদীর কোনো কোনো স্থানে পায়ে হেঁটে ও মেঠো পথে ঘোড়ার গাড়ীতে চলছে নদী পারাপার।
উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দেখছেন, নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় এর প্রধান শাখা নদী বড়াল, গড়াই, আত্রাই নদী প্রায় পানিশুন্য হয়ে পড়েছে। জিকে প্রজেক্ট কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। পদ্মা, মধুমতি, নবগঙ্গা, কাজলা, মাথাবাঙ্গা, আত্রাই, চিকনাই, হিনসা, কুমার, সাগরখালি, কপোতাক্ষ, চন্দনাসহ পদ্মার ৪৫টি শাখা-প্রশাখা নদীর বুকে জেগে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য চর।
মহানন্দা নদী রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানায় পদ্মায় মিলিত হয়েছে। পদ্মার পানি দিয়ে বোরো মওসুমে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর প্রভৃতি জেলায় সেচকাজ চালানো হয়। এ নদীর পানি দিয়ে প্রায় ২০ ভাগ জমির সেচকাজ চলে। বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, নৌ যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পদ্মা নদীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক নদী পদ্মা (গঙ্গা) উজানে ভারত বাঁধ দিয়েছে। ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে ভাগিরথী নদীর মাধ্যমে পানির প্রবাহ ঘুরিয়ে নিয়েছে। ফারাক্কার উজানে পানিতে ভরপুর। ভাটির বাংলাদেশে ক্রমেই তীব্র পানি সঙ্কটে নিপতিত হচ্ছে। প্রমত্তা পদ্মা নদীর সাথে সংযুক্ত প্রধান শাখা আত্রাই, গড়াইসহ অসংখ্য নদ-নদীতে পানির টান পড়েছে। এর সুদূরপ্রসারি প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। সেই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে আর্সেনিকের মাত্রা।
ভারত সেচ মৌসুমে ফারাক্কার উজান থেকে হাজার হাজার কিউসেক পানি প্রত্যাহার করা হয়ে থাকে। এর বিরুপ প্রভাবে ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রবাহ ব্যাপকভাবে কমে যায়। পদ্মা সংযুক্ত বরেন্দ্র অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত মহানন্দা, আত্রাই, বারনই, শিব, রানী ও ছোট যমুনাসহ ১২টি নদী ও ২০টি খালে এর প্রভাব পড়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, শুধুমাত্র ফারাক্কার প্রভাবে বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প-কারখানা সবকিছুতে মারাত্মক ক্ষতি করেছে। মিঠাপানি ছাড়া কৃষি তথা কোনো ধরনের শিল্প-কারখানা চলতে পারে না। ফারাক্কার কারণে যশোর-খুলনা অঞ্চলে মিঠাপানির প্রবাহ কমে গেছে। ফারাক্কার কারণে পদ্মার তলদেশ উপরে উঠে এসেছে। শুস্ক মৌসুমে এখন পদ্মায় তেমন ইলিশ পাওয়া যায় না। মাছ আসার জন্য নদীতে যে পরিমান পানি প্রবাহ থাকার কথা সেটি না থাকায় এখন আর পদ্মায় ইলিশ আসে না। পদ্মা নদীতে পানি স্বল্পতার কারণে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে মরুকরন অবস্থা স্থায়ীরুপ নিতে যাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে অনেক আগেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নদী বিশেষজ্ঞ কামরুন নেছার অভিমত, বাংলাদেশের পদ্মার যে বিপুল আয়তন তাতে স্বাভাবিক প্রবাহ থাকলে প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টির কথা উঠতো না। কিন্তু ভারত নেপালের কোশি থেকে শুরু করে ফারাক্কা পর্যন্ত সুদীর্ঘ পথে পানি প্রত্যাহারের যে একতফা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে- তাতে বাংলাদেশের বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
পানি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, উজানে ভারতের নদী কেন্দ্রিক পরিকল্পনার কারণে পলি পড়ে পদ্মা নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আর এর প্রভাবে উত্তর ও দক্ষিনাঞ্চলে পদ্মা সংযুক্ত প্রায় ৪৫টি নদী পানিশুন্য হয়ে পড়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা