০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১, ৩ রজব ১৪৪৬
`

নিকলীর হাওর অঞ্চলে মৎস্য ও পরিবেশ বিপর্যয়

পানিশূন্য হয়ে পড়া নিকলীর ঘোড়াউত্রার শাখা চালতাতলা নদী : নয়া দিগন্ত -

মৎস্য খেকো দুর্বৃত্তায়ন ও বিভিন্ন মহলের অসচেতনতার কারণে কিশোরগঞ্জের নিকলীর হাওরাঞ্চলের পরিবেশ হুমকির মুখে। নজরদারির অভাবে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্যহীনতায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র এই অঞ্চলটি। বিশেষ করে কৃষিসহ হাওরাঞ্চলের ১২টি সেক্টরের সমন্বয়ে কাজ করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই বলে দাবি তোলা হচ্ছে বিভিন্ন সচেতন মহল থেকে। তাদের ভাষ্য জনসচেতনতা ও প্রশাসনের তদারকিই পারে এই বিপর্যয় ঠেকাতে।
মৎস্য অধিদফতরের তথ্য মতে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হিমায়িত চিংড়িসহ সব মিলে ৪৯ লাখ ১৪ হাজার ৭১৫ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন এই হাওরাঞ্চল থেকে।
কিশোরগঞ্জের প্রবহমান একটি নদীর নাম ঘোড়াউত্রা। সিলেটের উত্তর-পূর্ব সিমান্তের বৃহৎ নদীর নাম সুরমা। উজানে জকিগঞ্জের বরাক মোহনায় এর উৎপত্তি। সেখান থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে দুটি ভাগে একটি সুরমা অপরটি কুশিয়ারা। সুরমা নদীটি সুনামগঞ্জ থেকে সোজা দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে নেত্রকোনা জেলার কালিয়াজুড়ি হয়ে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় প্রবেশের পর প্রবাহিত হয়েছে ধনু নদী নামে। এটি মিঠামইন ও নিকলীতে এসে ঘোড়াউত্রা নাম ধারণ করে বাজিতপুরের উপর দিয়ে কুলিয়ারচরের কাছাকাছি গিয়ে মেঘনায় পড়েছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, শাখা ও উপশাখা নদ-নদী হতে সৃষ্ট খাল-বিলে বর্ষা মৌসুমে পানি টইটম্বুর থাকলেও বোরো মৌসুমের আগেই নিকলীর ছালতাতলা নদীর মতো অসংখ্য নদী-নালার পানি শুকিয়ে যায়। বিঘœ ঘটে বোরো আবাদে। কিশোরগঞ্জের নরসুন্দর বিভিন্ন অংশে এবং তার শাখা-উপশাখাসহ ঘোড়াউত্রার শাখা-উপশাখার বেশ কিছু অংশের মতো হাওর অঞ্চলের অসংখ্য নদী শুকিয়ে গিয়ে বোরোর আবাদ হয়। সেই সাথে ধরা পড়ে প্রচুর স্বাদুপানির হাওরের মাছ। নদী ভরাট হয়ে আবাদযোগ্য ভূমিতে পরিণত হয়, অন্য দিকে মাছের বিচরণ ক্ষেত্র সঙ্কীর্ণ হয়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়ে স্বাদুপানির মাছ। সেই সাথে ঘটে পরিবেশ বিপর্যয়।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, স্থায়ীভাবে মাছের অভয়াশ্রম না থাকায়, হাওরে ক্ষতিকর চায়না জালের ব্যবহার, ইলেকট্রিক শক, বর্ষা মৌসুমে পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন, বোরো ধান রক্ষায় অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণসহ নানা কারণে মাছের প্রজননে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ধানের ক্ষেতে অতিমাত্রায় কীটনাশকের প্রয়োগও হাওরের মাছ কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিবেশ বিপর্যয়ের আরেকটি কারণ হাওরের আশপাশে গড়ে ওঠা ছোট-বড় শিল্প কারখানা। কারখানার কালো ধোঁয়া ও বর্জ্য পানিতে মিশে মৎস্য বিচরণের ক্ষেত্রকে সঙ্কুচিত করে ফেলছে। পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় রোগাক্রান্ত হচ্ছে মাছ এবং কমে যাচ্ছে মাছের প্রজনন উপযোগী জলাধার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিলুপ্ত প্রায় হাওর অঞ্চলের আঞ্চলিক মাছগুলোর মধ্যে রয়েছে- রানী মাছ, বেদরে মাছ, পাটের শাড়ি, ইটা, বাচা, পাবদা, কাক্কে, শোবল ও গুতুমসহ আরো বেশ কিছু প্রজাতির মাছ।
বাজিতপুর হিলোচিয়া জেলে পাড়ার ৬০ ঊর্ধ্ব সন্ধ্যা রানী আফসোস করে বলেন, সরকার হাওরগুলো ইজারা দিয়ে আমাদের জীবিকার উপায় কেড়ে নিয়েছে। এক সময়ে সারা বছর নদ-নদী ও হাওর-বাঁওড় থেকে মাছ ধরতাম, বিক্রি করতাম। ইজারা দেয়ার কারণে এখন নদীতে মাছ ধরার আর কোনো সুযোগ পাই না। সব মাছ নিঃশেষে সেচে নিংড়ে নিয়ে যায় ইজারাদাররা। আমরা উপোস করেই দিন কাটাই।
কিশোরগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, হাওরাঞ্চলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। হাওরে মাছের বংশবৃদ্ধি নিয়ে আমাদের কাজ চলছে।
পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মু: সোহরাব আলিকে গত ৩০ ডিসেম্বর একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে কিশোরগঞ্জের দায়িত্বে থাকা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মমিন ভূঁইয়া বলেন, পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী সব ধরনের কালো ধোঁয়া। এর কুপ্রভাব প্রকৃতির ওপর পড়ে বলে তিনি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement
সব সেক্টরে আওয়ামী সিন্ডিকেট এখনো বসে আছে : জামায়াত আমির দক্ষিণ কোরিয়া সফরে যাচ্ছেন ব্লিঙ্কেন কুমিল্লায় বিজিবির অভিযানে ৪০ লাখ টাকার মাদক ও অবৈধ মালামাল জব্দ উত্তরাঞ্চলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে বিদায় বেলায় ইরানে হামলার পরিকল্পনা বাইডেনের টাংগুয়ার হাওর থেকে মাছ ধরার ইলেকট্রনিক যন্ত্রসহ আটক ৩ ২০২৪ সালে বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে ২.১ শতাংশ : এফএও গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযানে ৪ মেরকাভা ট্যাংক ধ্বংস সাতক্ষীরার দেবহাটায় তিন পিস্তল ও গুলিসহ গ্রেফতার ১ ইসরাইলকে ৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দেয়ার পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের তুরাগ সংলগ্ন এলাকায় সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রত্যাহার

সকল