বাহাদুরাবাদ-বালাসী নৌরুটে নাব্যতা সঙ্কট
পড়ে আছে ১৭৫ কোটি টাকার ভৌত অবকাঠামো- খাদেমুল বাবুল জামালপুর
- ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
অবশেষে নাব্যতা সঙ্কটের কারণে বাহাদুরাবাদ-বালাসী নৌরুটে বন্ধ হয়ে গেছে ছোট-বড় সব ধরনের নৌচলাচল। অথচ এই নৌরুটে ফেরি চলাচলের জন্য দুই ঘাটে ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বিআইডব্লিউটিএ অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করে রেখেছে দৃষ্টিনন্দন নানা অবকাঠামো। ২০২১ সালের জুন মাসে উদ্বোধন করা হয় পৌনে ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাহাদুরাবাদ-বালাসী নৌঘাট দুটো। যেগুলো এখন অপ্রয়োজনীয় হিসেবে বেওয়ারিশ পড়ে আছে।
জানা গেছে, এই প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা চলে গেছে সংশ্লিষ্টদের পকেটে। ফলাফল এক দিনও চলেনি ফেরি! বরং সম্প্রতি ছোট ছোট ট্রলারও এখন চলাচল করতে পারে না এই রুটে। ফেরি চলাচলের সঠিক সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই সরকারি টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে প্রকল্পের নামে ব্যয় করা হয়েছে এই পৌনে দুই কোটি টাকা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরকারি টাকা লুটপাট করতেই প্রকল্পটি গ্রহণ করেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, সাবেক তথ্য সাংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ এবং ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।
উত্তরবঙ্গের ১৩ জেলার সাথে ময়মনসিংহ এবং বাজধানী ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করার নামে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করেন তারা। সরকারি টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনায় গৃহীত প্রকল্প এই অঞ্চলের মানুষের কোনো কাজে আসেনি। শুধু পকেট ভারী হয়েছে পতিত সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের।
যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ায় ২০০০ সালে সব রকমের ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এখানে। তবুও কেন যে ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এখানে ফেরি টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়, তার কোনো সদোত্তর কেউ দিতে পারে না। যদিও এই নৌরুটে ফেরি চলাচলের কোনো সম্ভাব্যতাই ছিল না।
যমুনা সেতু থেকে এই দুই ঘাটের দূরত্ব ২৬৭ কিলোমিটার। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপরে (বিআইডব্লিউটি) সূত্র মতে, উত্তরের ১৩ জেলার মধ্যে পণ্য সরবরাহ সহজতর করতে এবং যমুনা সেতুতে যানবাহনের চাপ কমাতে ২০১৪ সালে দুই ঘাটের মধ্যে ফেরি চালুর সিদ্ধান্ত নেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। ২০২৪ সালের মার্চে তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, নৌরুটটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। যার পরিপ্রেেিত ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর একনেকের সভায় পাস হয় বালাসী-বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট টার্মিনালসহ প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণের এই অপরিকল্পিত প্রকল্প। বালাসী-বাহাদুরাবাদ ঘাটের দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএর এক প্রকল্প পরিচালক বলেন, ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দেবে এটি স্বাভাবিক। এটি জানার পরও প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল কেন?
২০২২ সালের ৯ এপ্রিল নৌপথটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। উদ্বোধনের দিনই নাব্যতা সঙ্কট নিয়ে বিআইডব্লিউটির প্রকৌশলীদের ওপর ক্ষোভ দেখান প্রতিমন্ত্রী। পরে প্রতিমন্ত্রীকে দিয়ে মেরিনের বদলে লঞ্চ সার্ভিস উদ্বোধন করানো হয়। প্রথম দুইটি এবং পরে ছয়টি লঞ্চ চলাচলের ব্যবস্থা করা হলেও সেটি কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায়।
বাহাদুরাবাদ ঘাটের নৌযান ইজারাদার মনজুরুল হক বলেন, নাব্যতা সঙ্কটের কারণে প্রতিদিন ডুবোচরে নৌকা আটকা পড়ে, যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হন।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটির ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ বলেন, বাহাদুরাবাদ-বালাসী নৌরুট খনন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে তা বাস্তবায়ন করা যায়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা